বর্ষার জমা জল থেকে ছড়াতে পারে লেপ্টোস্পাইরোসিস, কী ভাবে সতর্ক থাকবেন? ফাইল চিত্র।
রাতভর বৃষ্টিতে জল জমছে শহরের নানা জায়গায়। সেই জমা জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে দূষিত জল থেকে নানা অসুখবিসুখও ছড়াচ্ছে। বর্ষার এই সময়ে জলবাহিত যে রোগগুলি মাথাচাড়া দেয়, তার মধ্যে একটি হল লেপ্টোস্পাইরোসিস। প্রতি বছর এই রোগের প্রকোপ বাড়ে দেশের নানা জায়গায়। সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুও হয়। তাই বৃষ্টির দিনে এই রোগটি নিয়ে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হচ্ছে।
লেপ্টোস্পাইরোসিস কী?
‘লেপ্টোস্পাইরা ইন্টেরোগ্যানস’ ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকেই হয় এই রোগ। কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর মল-মূত্র থেকে সংক্রমণ ঘটে। রোগটি এমনিতে খুব পরিচিত নয়। তাই এই নিয়ে সচেতনতাও কম। সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, এই রোগ প্রধানত ইঁদুর, ছুঁচো বা বেজি ইত্যাদি প্রাণীর বর্জ্য পদার্থ থেকে ছড়ায়। সাধারণত এই সব প্রাণীরা মাটিতেই তাদের বর্জ্য ত্যাগ করে। বর্ষার সময় তা জলে মিশে যায়। ফলে জমে থাকা জল থেকেই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।
জলবাহিত হয়ে ওই ব্যাক্টেরিয়া যদি শরীরে ঢুকে পড়ে, তা হলে খুব দ্রুত সংখ্যায় বাড়তে থাকে। এই রোগের ক্ষেত্রে জ্বর প্রথম উপসর্গ। জ্বরের সঙ্গে হাতে পায়ে তীব্র যন্ত্রণা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করলে তবেই এই রোগ ধরা পড়বে। সাধারণ ভাবে এই রোগ ধরা যাবে না। লেপ্টোস্পাইরোসিস রোগটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে লিভার ও কিডনি বিকল হতে পারে। নাক দিয়ে, মাড়ি দিয়ে, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বার হতে পারে। সেই সঙ্গেই ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটবে। মেনিনজাইটিসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ, মস্তিষ্কে প্রদাহ হবে, রোগীর খিঁচুনিও হতে পারে।
সতর্ক থাকার উপায়
প্রথমেই জমা জল এড়িয়ে চলতে হবে। অনেক সময়ে জমা জল পেরোনোর জন্য জুতো হাতে নিয়ে খালি পায়েই যাতায়াত করেন অনেকে। ফলে পায়ের ফাটা অংশ বা কাটাছেঁড়ার জায়গা দিয়েই এই জল শরীরে প্রবেশ করে। তাই বর্ষার সময়ে কখনওই খালি পায়ে জমা জলে হাঁটবেন না। আর যতটা পারেন জমা জল এড়িয়ে চলুন।
বাইরে থেকে ফিরলে হাত ও পা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। হাত স্যানিটাইজ় করে তবেই খাবার খাবেন।
জল ফুটিয়ে খাওয়াই ভাল। রাস্তায় বিক্রি হওয়া শরবত বা নরম পানীয় খাবেন না।
রাস্তায় যে পোশাক পরে বেরোচ্ছেন, তা ভাল করে পরিষ্কার করতে হবে। অপরিচ্ছন্ন পোশাক ঘরে রেখে দেবেন না।
লেপ্টোস্পাইরোসিসের চিকিৎসা অ্যান্টিবায়োটিকে হয়। তবে নিজে থেকে ওষুধ খেতে যাবেন না। যদি দেখেন, জ্বর কমছে না, ঘন ঘন বমি হচ্ছে, নাক দিয়ে রক্ত বার হচ্ছে অথবা জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হচ্ছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।