কোন কোন ওষুধের কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হচ্ছে? ছবি: ফ্রিপিক।
এক জন বা দু’জনের সমস্যা নয়। চোখের বিরল অসুখ ছড়িয়েছে বহু মানুষের মধ্যেই। কারও রেটিনার ক্ষয় ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে, কারও দৃষ্টিজনিত সমস্যা তৈরি হয়েছে। ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের অনেকেই বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের (এএমডি) মতো চোখের অসুখে ভুগছেন। ডায়াবিটিসের রোগীদের এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে ওজন কমানোর ওষুধকেই দায়ী করেছেন গবেষকেরা। ‘জিএলপি-১ রিসেপটর’ রয়েছে, এমন কিছু ওষুধের কারণেই চোখের অসুখ বাড়ছে বলেই দাবি।
কানাডার বিজ্ঞানীরা ষাটোর্ধ্ব ৪৬ হাজার মানুষের উপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। দেখা গিয়েছে, যাঁরা ডায়াবিটিসের জন্য এমন ওষুধ খাচ্ছেন যাতে ‘জিএলপি-১ রিসেপটর’ বা ‘সেমাগ্লুটাইড’ জাতীয় উপাদান রয়েছে, তাঁদের বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন রোগটি বেশি হচ্ছে। ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমাতেও ভুগছেন অনেকে। এতে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হচ্ছে কারও, আবার কারও দৃষ্টিশক্তি একেবারেই চলে যাচ্ছে। ‘ডিজেনারেশন’ মানে হল ক্ষয়। এই সব রোগে রেটিনার ক্ষয় হতে শুরু করে। রেটিনার একেবারে কেন্দ্রে থাকে ছোট বিন্দু ম্যাকুলা, যা যে কোনও বস্তুকে সোজাসুজি ও স্পষ্ট দেখতে সাহায্য করে। ম্যাকুলা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৃষ্টি অস্বচ্ছ হয়। ম্যাকুলার যে সমস্যা হচ্ছে, তা বোঝা যায় বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখে। বই-কাগজ পড়তে গেলে বা কোনও কিছু দেখার সময়ে গোল কালো ছায়া বা কালো পর্দা এসে পড়ে চোখের সামনে। সোজা লাইন এঁকেবেঁকে যায়, টিভির পর্দার ছবি রংহীন মনে হয়। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে হতে একেবারে চলে যেতে পারে। বয়সকালে দৃষ্টি এমনিতেও ঝাপসা হয়ে আসতে থাকে, কিন্তু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তা আরও দ্রুত হয়। আর যাঁরা ওজন কমানোর জন্য ‘সেমাগ্লুটাইড’ জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদেরও এই সব চোখের রোগ হতে দেখা যাচ্ছে।
টরন্টো ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা জানিয়েছেন, ওজ়েম্পিক, ওয়েগোভির মতো ওষুধে ‘সেমাগ্লুটাইড’ বেশি পরিমাণে রয়েছে। বর্তমানে অনেকেই তাড়াতাড়ি রোগা হবেন বলে এই জাতীয় ওষুধ বেশি ডোজ়ে খেয়ে ফেলছেন। ফলে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ওজ়েম্পিকের মতো ওষুধ ডায়াবিটিসের রোগীদেরই দেওয়া হয়। আবার ওজন কমানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। ওজন ১০০ কেজি ছাড়িয়ে গেলে ও সেই সঙ্গে ডায়াবিটিস ও আনুষঙ্গিক রোগ থাকলে, তবেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধটি নেওয়া যেতে পারে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তা নিতে হয়। যদি কেউ বেশি মাত্রায় ডোজ় নিয়ে ফেলেন এবং দিনের পর দিন নিতে থাকেন, তা হলে রেটিনার ক্ষতি হবেই। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও রকম ওষুধ নিতে বারণ করছেন গবেষকেরা।