ধূমপান ছাড়া আর কী কী থেকে হচ্ছে মুখ ও গলার ক্যানসার?
সিগারেটে টান না দিলেও হতে পারে মুখ ও গলার ক্যানসার। ইদানীংকালে তেমনটাই বেশি দেখা যাচ্ছে। ধূমপান যাঁরা করেন না, তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন মারণরোগে। ‘হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার’ এবং ‘ওরাল ক্যানসার’-এ আক্রান্তের সংখ্যা এ দেশে বেড়েই চলেছে। পাবমেড থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, অধূমপায়ীদের মধ্যে এই ধরনের ক্যানসার বেশি দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।
ধূমপান ছাড়া আর কী কী থেকে হতে পারে মুখ ও গলার ক্যানসার?
মুখ ও গলার ক্যানসারের মধ্যে প্রধানত মুখগহ্বর, গলা, নাক, ঘাড়, জিভ, গলার গ্রন্থির ক্যানসার পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্যানসারের লক্ষণ ধরা পড়ে দেরিতে। যদি গলায় ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড হয়, তা হলে সতর্ক হতে হবে। খাবার খেতে সমস্যা, ঢোঁক গিলতে কষ্ট, ঘন ঘন কাশি এবং কাশির সঙ্গে রক্ত বার হতে পারে। নাক, কান, মুখ, গলা— শরীরের যে কোনও অঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। মলদ্বার থেকেও অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে।
এই বিষয়ে ক্যানসারের চিকিৎসক শুভজিত চক্রবর্তী বলছেন, “মুখ ও গলার ক্যানসারের কারণ অনেক। কেবল ধূমপান নয়, এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী মদ্যপান, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি), সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি থেকে ঠোঁটের ক্যানসার হতে পারে এবং কয়েক ধরনের যৌন রোগও এর জন্য দায়ী।” মুখ ও গলা-ঘাড়ের ক্যানসারে আক্রান্তদের একটা বড় অংশের বয়স ৪০ থেকে ৬০। ১৮-২৫ বছরের ছেলেমেয়েদেরও এই রোগ হচ্ছে। দেখা গিয়েছে, স্কুল থেকেই তাদের অনেকে পানমশলা বা গুটখার নেশা করছে। তা থেকেও হচ্ছে ক্যানসার।
দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভাল রাখাও জরুরি। । প্রাথমিক পর্যায়ে বেশির ভাগ মানুষই আলসার বা খাওয়ার সময় মুখের কোনও অংশে জ্বালা বা ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। পরবর্তী কালে দেখা যায় এটিই ওরাল ক্যানসারে পরিণত হয়েছে। আসলে দীর্ঘ দিন ধরে উপসর্গ দেখা দেওয়া সত্ত্বেও মানুষ সচেতন নন, এমনটাই মত চিকিৎসকের। মুখের আলসার বা জিভের নীচে মাংসপিণ্ড গজালে তা ভিটামিনের অভাব ভেবে নানা রকম সাপ্লিমেন্টও খেতে শুরু করেন অনেকে। তা থেকেও রোগ বেড়ে যায় দ্রুত গতিতে। অথচ মুখ ও গলার ক্যানসার গোড়ায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় নিরাময়ও হয় অনেক সময়েই।
চিকিৎসার পরে প্রথম দু’বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ক্যানসার আবারও ফিরে আসতে পারে। এই সময়টা খুব সংবেদনশীল। বার বার পরীক্ষা করানো জরুরি। ক্যানসার নিরাময় হলেও বা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বছর পাঁচেক পরীক্ষা করিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গেই জীবনযাপনে সংযম আনা জরুরি। তামাকজাত যে কোনও দ্রব্য বর্জন করতে হবে। দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য যাতে ভাল থাকে, সে খেয়ালও রাখতে হবে।