Child Obesity

বাড়ছে শিশুদের ওজন, বিশ্বে প্রতি ৫ জন শিশুর ১ জন স্থূলত্বের শিকার, ভয় ধরানো তথ্য দিল ইউনিসেফ

ভারতে প্রায় দেড় কোটি শিশু মাত্রাতিরিক্ত ওজন আর স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগছে বলে মনে করা হচ্ছে। শিশুদের অতিরিক্ত ওজনের প্রবণতা ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৩২
Share:

কেন ওজন বাড়ছে শিশুদের? ছবি: এআই।

শিশু অপুষ্টির ছবিটা এক সময়ে ভয় ধরাত। বিশ্ব জুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুহারে এখনও উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটেনি। তবে তারই মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে স্থূলত্ব। শিশুদের মধ্যে ওবিসিটি বা স্থূলত্বের প্রবণতা, মাত্রাতিরিক্ত ওজন এখন বিশ্বের অন্যতম বড় সমস্যা। বলা যায়, বিশ্বব্যাপী মহামারি। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক সমীক্ষার ফলও ভয় ধরানো। রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে বিশ্ব জুড়ে প্রায় ২০ শতাংশ শিশু (প্রতি পাঁচ জনের এক জন) স্থূলত্ব বা অতিরিক্ত ওজনের শিকার, অপুষ্টিতাড়িত শিশুর সংখ্যা সেখানে ১০ শতাংশেরও কম। অথচ ২০০০ সালে কম ওজন বা অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যাই ছিল বেশি, যা প্রায় ১৩ শতাংশ।

Advertisement

বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ২৫-এর বেশি হলে অতিরিক্ত ওজন বলে চিহ্নিত করা হয়, আর ৩০-এর বেশি হলেই তা স্থূলত্বের অবস্থা বলে ভাবা হয়। এক সময় মনে করা হত, শৈশবকালীন স্থূলত্ব আসলে উন্নত দেশগুলিরই সমস্যা, যেখানে মানুষের মাথাপিছু আয় বেশি, সেখানেই শিশুদের অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানো হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, উদীয়মান অর্থনীতির উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও শিশুদের স্থূলত্ব ক্রমবর্ধমান।

কেন বাড়ছে ওজন?

Advertisement

প্রথমত, ছোট থেকে অতিরিক্ত তেলমশলাদার খাবার, প্যাকেটজাত রাস্তার খাবার খাওয়ার প্রবণতা।

দ্বিতীয়ত, কম পরিশ্রম, খেলাধূলা কম করা।

তৃতীয়ত, কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এমন হতে পারে।

বাইরের খাবারের প্রতি ঝোঁক, শরীরচর্চার অভাব শিশুদের স্থূলত্বের অন্যতম কারণ। সন্তানের মন রাখতে বাবা-মায়েরাও বাইরের খাবার কিনে দিচ্ছেন। শিশুর হাতে মোবাইল, ট্যাব ধরাচ্ছেন। ফলে ছোটরা এখন বাইরে বেরিয়ে খেলাধূলার বদলে ঘরেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল বা ট্যাব নিয়ে বসে আছে। খুব বেশি চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবারেও আসক্তি জন্মাচ্ছে ছোটদের, যা স্থূলত্বের অন্যতম কারণ। ছোট থেকেই গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শরীরচর্চা না করার কারণে শিশুদের আলস্য বাড়ছে। ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’ হানা দিচ্ছে ছোট থেকেই। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার শিশু ও কমবয়সিরা সবচেয়ে বেশি মেটাবলিক সিনড্রোমে আক্রান্ত। ফলে শিশুর পেট ও তলপেটে মেদ জমছে। চওড়া হচ্ছে কোমর। এই দশাকে ‘ট্রাঙ্কাল ওবিসিটি’ বলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, মেদ তো কেবল বাইরে জমে না, পাকস্থলীর ভিতরেও জমে। তখন অগ্ন্যাশয়ে চাপ পড়তে থাকে। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণও বেড়ে যায়। ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

ভারতেও প্রায় দেড় কোটি শিশু মাত্রাতিরিক্ত ওজন আর স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগছে বলে মনে করা হচ্ছে। শিশুদের অতিরিক্ত ওজনের প্রবণতা ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। দুই থেকে চার বছর বয়সি অতিরিক্ত ওজনের শিশুদের অনুপাত ২০১৭ সালে ছিল ১১.৫ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে তা ১৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাবা-মায়েরা কী ভাবে সতর্ক হবেন?

১) চিনিযুক্ত পানীয়, পিৎজ়া, বার্গার, চিপ্‌সের মতো বাইরের খাবার সন্তানের রোজের খাদ্যতালিকায় যাতে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখুন।

২) ছোটবেলা থেকেই শিশুকে নির্দিষ্ট নিয়মে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। মা-বাবাকেও মানতে হবে কিছু নিয়ম। রান্না করতে ইচ্ছে করছে না বলে শিশুকে যথেচ্ছ সাপ্লিমেন্ট বা ‘হেল্‌থ ড্রিঙ্ক’ খাইয়ে রাখা, কিংবা যখন তখন বায়না করলেই চকোলেট দিয়ে বায়না মেটানো, ঘুম থেকে তুলে পড়তে বসানো এ সব অভ্যাস বদলাতেই হবে।

৩) ছোট থেকে শরীরচর্চার অভ্যাস তৈরি হলে মেদ জমার প্রবণতা কমে। শিশুকে নিয়ম করে যোগাসন অভ্যাস করাতে হবে। তার জন্য অভিজ্ঞ যোগাসন প্রশিক্ষকের পরামর্শও জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement