গ্রাফিক— আনন্দবাজার ডট কম।
বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেলে বিবাহিত মহিলার সন্তান না হলে তাঁর জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কারণ সমাজ মনে করে, জন্মদাত্রীরা প্রজননগত দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি ‘উর্বর’ থাকেন ৩৫ বছর পর্যন্ত। তার পরে ধীরে ধীরে তাঁদের সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে। কারণ, তাঁদের ডিম্বাণুর নিষিক্ত হওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে। একটি গবেষণা সেই ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে দিল।
নতুন ওই গবেষণা বলছে, মহিলাদের প্রজনন বয়স যত দিন থাকে অর্থাৎ যত দিন তাঁর ঋতুস্রাব হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত তাঁর ডিম্বাণু ভাল থাকে। বরং পুরুষের শুক্রাণুর অবনতি হতে থাকে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে। আর এই বয়স বৃদ্ধি ৬০ বছরের পরে নয়। প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছনোরও অনেক আগে থেকে প্রজনন ক্ষমতার অবনতি হতে শুরু করে তাঁদের। কমতে থাকে শুক্রাণুর মান, সংখ্যাও। যা থেকে সন্তানের অটিজ়মের মতো সমস্যাও হতে পারে।
গবেষণাটির কাজ চলতি বছরেই শেষ করেছে পেনে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের সায়েন্স অ্যাডভান্সেস নামের মেডিক্যাল জার্নালেও। গবেষকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা ২২ বছর বয়সি মহিলা থেকে শুরু করে মধ্যচল্লিশের মহিলাদের শরীর থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করে তার বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৩৫ বছরের পরেও মহিলাদের ডিম্বাণুর অবনতি হয়নি। এমনকি, বয়সের প্রভাব পড়েনি মধ্যচল্লিশের মহিলাদের শরীর থেকে নেওয়া ডিম্বাণুতেও।
বিষয়টি বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা যে পরীক্ষা করেছিলেন, তা হল মাইটোকনড্রিয়াল ডিএনএ মিউটেশনের পরীক্ষা। বয়স বাড়লে তার প্রভাব পড়ে এই মাইটোকনড্রিয়াল ডিএনএ মিউটেশনে। যত বয়স বাড়ে, তত মিউটেশনের মাত্রাও বাড়ে। যা থেকে কোষগুলি তার সম্পূর্ণ কাজ আর করে উঠতে পারে না। ২২ থেকে মধ্য চল্লিশের মহিলাদের শরীরের অন্যান্য অংশে, যেমন রক্তে, লালারসে মিউটেশন বাড়লেও ডিম্বাণুতে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। সমস্ত বয়সের মহিলাদের ডিম্বাণুতেই সমান মাত্রার মিউটেশন হয়েছে। যা দেখে বিস্মিত হয়েছেন গবেষকেরাও। কারণ তাঁরাও ভেবেছিলেন যে, বেশি বয়সের মহিলাদের ডিম্বাণুতে মিউটশন বেশি হবে।
অন্য দিকে, পুরুষদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে এর ঠিক উল্টো ফল। পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণাতেই বলা হচ্ছে বাবাদের বয়স বাড়লেই বরং হবু সন্তানের স্নায়বিক সমস্যার কারণ হতে পারে। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে গর্ভপাতের কারণও হতে পারে। এ ব্যাপারে রিও ডি জেনেইরোর কাক্সিয়াস ডো সুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার উল্লেখও করেছেন পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। সেই গবেষণা বলছে, পুরুষেরা ৪০-৪৫ বছরের সীমা পেরনোর পরেই তাঁদের শুক্রাণুর মান খারাপ হতে শুরু করে।
ওই গবেষণা বলছে ২৫-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে। তার পরে তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ৪৫ বছর বয়সি পুরুষের সন্তানের জন্ম দিতে পাঁচ গুণ বেশি সময় লাগতে পারে।
অর্থাৎ গবেষণালব্ধ তথ্য মানলে ৩৫-এর পরে মহিলারা নন, পুরুষেরাই ধীরে ধীরে প্রজনন ক্ষমতা হারাতে শুরু করেন। যদিও সমাজ ঠিক তার উল্টোটাই ভাবে।