ক্যানসারের ঝুঁকিই থাকবে না, প্রাণ বাঁচবে একটি রক্ত পরীক্ষায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ক্যানসারের নিত্যনতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে যত হইচই হচ্ছে, তার চেয়েও বেশি হচ্ছে ক্যানসার চিহ্নিতকরণের পদ্ধতি নিয়ে। কারণ, বেশির ভাগ সময়েই ক্যানসার সঠিক সময়ে ধরা পড়ে না। তলে তলে তা ছড়াতে থাকে শরীরে। ফলে শেষের দিকে গিয়ে চিকিৎসায় আর তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। রক্তের ক্যানসার এবং মুখ ও গলার ক্যানসারের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই তা হয়। এই ধরনের ক্যানসারের উপসর্গ আগেভাগে দেখা দেয় না। ফলে রোগী বুঝতেই পারেন না যে, তিনি শরীরে ভয়ানক কর্কট রোগ বহন করে চলেছেন। উপসর্গ নেই বা কম ধরা পড়ে, এমন ধরনের ক্যানসার চিহ্নিত করতে রক্তের নতুন এক পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং মাস জেনারেল ব্রিগহাম গবেষণা সংস্থা এই নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে।
মুখ ও গলার ক্যানসারের জন্য দায়ী একটি ভাইরাস যার নাম ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস’ (এইচপিভি)। ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, এই ভাইরাস শরীরে ঘাপটি মেরে থাকে। বছরের পর বছর এর কোনও উপসর্গ প্রকাশ পায় না। তলে তলে ক্যানসার কোষের বিভাজন চলতে থাকে। যত দিনে ক্যানসার ধরা পড়ে, তত দিনে রোগী স্টেজ ৩ বা স্টেজ ৪-এ পৌঁছে যান। রক্তের নতুন পরীক্ষায় এই ভাইরাসকে শনাক্ত করা সম্ভব। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, পরীক্ষাটি করলে জিনগত স্তরে ভাইরাসের শনাক্তকরণ সম্ভব। এতে বোঝা যাবে, ভবিষ্যতে সেই ব্যক্তি ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন কি না।
‘ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট’ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক ড্যানিয়েল এল ফ্যাডেন জানিয়েছেন, মুখ ও গলার ক্যানসারের মধ্যে প্রধানত মুখগহ্বর, গলা, নাক, ঘাড়, জিভ, গলার গ্রন্থির ক্যানসার পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্যানসারের লক্ষণ ধরা পড়ে দেরিতে। যদি গলায় ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড হয়, তা হলে সতর্ক হতে হবে। খাবার খেতে সমস্যা, ঢোক গিলতে কষ্ট, ঘন ঘন কাশি এবং কাশির সঙ্গে রক্ত বার হতে পারে। নাক, কান, মুখ, গলা— শরীরের যে কোনও অঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। মলদ্বার থেকেও অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। তবে এই সব লক্ষণ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। এইচপিভি ভাইরাস শরীরে ঢুকে নিঃশব্দে তার বংশবিস্তার করতে থাকে। ফলে বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস। এই সময়টা এক বছরও হতে পারে আবার দশ বছরও হতে পারে। রক্তে ভাইরাসের ডিএনএ মিশে আছে কি না, তা সাধারণ রক্ত পরীক্ষা ধরা অসম্ভব। সে কারণেই নতুন এক পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে।
রক্তের পরীক্ষার নতুন পদ্ধতির নাম ‘এইচপিভি-ডিপসিক’। গবেষকেরা ৫৬ জনের রক্তের নমুনা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করেছেন। দেখা গিয়েছে, ২৮ জনের রক্তে এইচপিভি ভাইরাসের ডিএনএ আছে। এঁদের মধ্যে ২২ জনের ভবিষ্যতে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও আছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, আগে থেকে ধরা পড়লে ক্যানসার হানা দেওয়ার আগেই তাকে রুখে দেওয়া সম্ভব হবে। পরীক্ষাটি বহু জনের উপর করে দেখা হচ্ছে। যদি তা সব ক্ষেত্রে সফল হয়, তা হলে মুখ ও গলার ক্যানসার এবং রক্তের ক্যানসারের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক কমে যাবে।