চলতে-ফিরতে পড়ে যাবেন না, বয়স্কদের যখন-তখন পড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
হাঁটতে-চলতে গিয়ে দুমদাম পড়ে যান? শুকনো মাটিতেই আছাড় খান যখন তখন। আজ পড়ে গিয়ে মাথা ফুলছে, তো কাল পা মচকাচ্ছে। শরীরের ভারসাম্যই যেন নেই। তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে গিয়ে রাস্তাঘাটে মাঝেমধ্যেই পড়ে গিয়ে অঘটন ঘটান অনেকেই। বয়স্কদের সমস্যা আরও বেশি। মাথাঘোরা, টাল খেয়ে বাথরুমে পড়ে গিয়ে ভোগান্তি বাড়ে। এর জন্য ‘বডি ব্যালান্স’ ঠিক রাখার কথা বলেন অনেকে। সেটি হবে কী করে? কোনও জটিল ব্যায়াম বা যোগাসনের প্রয়োজন নেই, মাত্র ৩০ সেকেন্ডের একটি ছোট্ট কাজই যথেষ্ট।
‘বডি ব্যালান্স’ বা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই জরুরি একটি বিষয়। অনেকেরই ব্যালান্সিংয়ের সমস্যা থাকে। মূলত অসুস্থতা থেকেই এই সমস্যা দেখা দেয়। মাথায় অস্ত্রোপচার বা আঘাত, স্ট্রোক, ভেস্টিবিউলার ডিজ়অর্ডার, নার্ভজনিত সমস্যা, স্পন্ডিলোসিস, রক্তচাপের সমস্যা, হাড়ের সমস্যা— নানা কারণে তা হতে পারে। এ ছাড়া বয়সজনিত এবং ওজন বাড়ার ফলেও ব্যালান্সিংয়ের সমস্যা দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র হিসেব বলছে, বিশ্ব জুড়ে ৬ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ পড়ে যাওয়া। বয়স্কদের বাথরুমে পড়ে গিয়েই বিপদ বেশি ঘটে। পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত বা ব্রেন ডেথ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। সে কারণে শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখা জরুরি। তার জন্য ৩০ সেকেন্ডের ‘ব্যালান্স টেস্ট’ শিখিয়ে দিয়েছেন বেঙ্গালুরুর গবেষকেরা। এর নাম ‘ট্যানডেম স্টান্স টেস্ট’।
শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখার পরীক্ষা
শরীরের ভারসাম্য ঠিক আছে কি না, স্নায়ুর জোর কতটা, তা বোঝা যাবে পরীক্ষাটি করলে। ‘ট্যানডেম স্টান্স’ মানে হল একটি পা, অন্য পায়ের ঠিক সামনে রাখা। ধরুন, হাঁটছেন তখন ডান পায়ের পাতা বাঁ পায়ের ঠিক সামনে নিয়ে যেতে হবে। বাঁ পায়ের আঙুল যেন ডান গোড়ালি স্পর্শ করে। দুই পায়ের পাতা একই সরলরেখায় থাকবে। এই ভাবে আবার বাঁ পা ডান পায়ের সামনে নিয়ে যেতে হবে। এই ভাবে ৩০ সেকেন্ড যদি নির্ভুল ভাবে করা যায়, আর একটি বারও ব্যালান্স হারিয়ে পড়ে না যান, তা হলে বুঝবেন, আপনার শরীরের ভারসাম্য ঠিক আছে। যাঁদের নেই, তাঁরা নিয়ম করে অভ্যাস করলে ‘বডি ব্যালান্স’ অনেক বাড়বে।
‘ট্যানডেম স্টান্স টেস্ট’ নিয়ে পাবমেড থেকেও একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গবেষকেরা রোজ অন্তত ১০ সেকেন্ড করে এই ব্যালান্সের পদ্ধতি অভ্যাস করার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে শরীরের ভারসাম্য তো বৃদ্ধি পায়ই, যখন তখন আছাড় খাওয়ার প্রবণতাও কমে। আরও কিছু লাভ হয়, যেমন—
১) সেরিব্রাল পলসির মতো অসুস্থতায় শিশুদের শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। অনেকে পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে হাঁটে। সে ক্ষেত্রেও ‘ট্যানডেম স্টান্স টেস্ট’ অভ্যাস করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
২) শরীরের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার একটা বড় কারণ স্পন্ডিলোসিস। যাঁদের আছে, তাঁরা জানেন, মাঝেমধ্যেই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। এই পদ্ধতি অভ্যাস করলে লাভ হতে পারে।
৩) চল্লিশের পর থেকেই অনেকের হাড়ের সমস্যা দেখা যায়। হাঁটুর জোর কমে যায়। এ ছাড়াও আঘাতজনিত সমস্যা থাকতে পারে। স্নায়ুর রোগের কারণেও হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি উপযোগী হতে পারে।