হার্ট অ্যাটাকের আগাম খবর দেবে তিন পরীক্ষা। ছবি: ফ্রিপিক।
সুস্থ-সবল মানুষ। কোনও অসুখবিসুখ নেই। আচমকাই একদিন বুকে ব্যথা, তার পর ধরা পড়ল হার্ট অ্যাটাক। এমন ঘটনা আকছারই ঘটছে। হৃদ্রোগ অনেক সময়েই বলেকয়ে আসে না। হার্টের ধমনীতে নিঃশব্দে রক্ত জমাট বাঁধছে কি না, তা বোঝে কার সাধ্য। বুকে ব্যথা নেই, রাতে শুয়ে ঘামও হয় না, অন্যান্য যা ভীতিকর লক্ষণের কথা বলা হয়, তা-ও নেই। এর পরেও ধরা পড়তে পারে হৃদ্রোগ। কারণটা হল রক্ত জমাট বেঁধে হৃৎস্পন্দন পুরোপুরি বিগড়ে যাওয়া। এই সমস্যা যদি গোড়াতেই ধরতে হয়, তা হলে কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে উচ্চ কোলেস্টেরল ও হৃদ্রোগের ইতিহাস আছে, তাঁরা অবশ্যই করিয়ে নেবেন।
ধমনীর মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। অন্য দিকে শিরা দূষিত রক্ত বহন করে। শরীরে রক্ত সর্বদা প্রবহমান। কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে রক্তনালির ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধা বিপজ্জনক। তা যদি হার্টের ধমনীতে হয়, তখন তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘করোনারি থ্রম্বোসিস’। এতে হার্টের পেশি পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে পেশির সঙ্কোচন-প্রসারণও থেমে যেতে পারে হঠাৎ করেই। ফলত আচমকা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে তিন রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে রাখাই ভাল।
অ্যাডভান্স ব্লাড প্যানেল টেস্ট
সাধারণ রক্ত পরীক্ষার চেয়ে কিছুটা আলাদা। নানা রকম রক্তের পরীক্ষা একসঙ্গে করা হয় যাতে কয়েকটি বিষয় বুঝতে পারেন চিকিৎসকেরা। যেমন, হার্টের ধমনীতে কোলেস্টেরল জমা হচ্ছে কি না, রক্তনালিতে কোনও রকম প্রদাহ হচ্ছে কি না, হার্টে ঠিকমতো রক্ত সংবহন হচ্ছে কি না। এর কোনও একটিতে গলদ থাকলে, তখন সতর্ক হতে হবে।
ট্রপোনিন টেস্ট
হার্টের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এক ধরনের প্রোটিন নিঃসৃত হয়। সেই প্রোটিন গিয়ে মেশে রক্তে। এর নাম ট্রপোনিন। রক্তে যদি এর মাত্রা বেশি হয়, তা হলে বুঝতে হবে হার্টে গোলমাল বেধেছে। ট্রপোনিন টেস্ট করিয়ে নিলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে কি না, তা-ও ধরা যায়।
ভিও২ ম্যাক্স পরীক্ষা
হার্টের যে কোনও রোগব্যধি ধরার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা। এর পুরো নাম হল ‘ভলিউম অফ অক্সিজেন ম্যাক্সিমাম’। শরীরে কী পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছচ্ছে, তার কতটা কোষে কোষে পরিবাহিত হচ্ছে, তা পরিমাপ করা যায় এই পরীক্ষায়। শরীরের ওজন অনুযায়ী মিনিট প্রতি কত মিলিলিটার অক্সিজেন ব্যবহৃত হচ্ছে সেই পরিমাণ প্রকাশ করা হয়। এর মান যত বেশি হবে, বুঝতে হবে, শরীর ততটাই সক্ষম ও সচল। এই পরীক্ষায় ট্রেডমিল ও সাইকেল ব্যবহৃত হয়। মুখে পরিয়ে দেওয়া হয় মাস্ক যা শ্বাসপ্রশ্বাসে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইডের মাত্রা পরিমাপ করে। এর পর ট্রেডমিল বা সাইকেলের রেজ়িস্ট্যান্স বাড়ানো হয়। এই সময়ে শরীরে কতটা অক্সিডেন ঢুকছে, হৃৎস্পন্দনের হার ও রক্তচাপের ওঠানামাও মাপা হয়। এই পরীক্ষা করালে ধরা পড়বে হার্টের অবস্থা কেমন, হৃদ্রোগের ঝুঁকি আছে কি না।