রোজের কোন তিন অভ্যাস হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে? ছবি: ফ্রিপিক।
বুকে চিনচিনে ব্যথা। তার পরেই দরদর করে ঘাম। শরীর জুড়ে অস্বস্তি। দমবন্ধ হয়ে যেতে যেতে আচমকা হার্ট অ্যাটাক। এমন পরিস্থিতিতে রোগীকে বাঁচানোর সময়টুকুও পাওয়া যায় না অনেক সময়েই। হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক এমন ভাবেই হানা দেয় আচমকা ও লহমায় সব কিছু তছনছ করে চলে যায়। গভীর ঘুমের মধ্যেও নিঃশব্দে হানা দিতে পারে হার্ট অ্যাটাক। আর হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে রোজের যাপনের কিছু খারাপ অভ্যাসের কারণে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ এবং আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষকেরা হৃদ্রোগ হওয়ার মূল তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ওই তিন কারণর জন্য চল্লিশ পেরিয়ে গেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
কোন তিন অভ্যাস দায়ী
অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান
অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে শরীরের নানা ভাবে ক্ষতি হয়। ধূমপানের কারণে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। যে কারণে ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এর ফলে হৃৎপিণ্ড আর মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়। সঙ্গে রক্তনালিতে চর্বি, খারাপ কোলেস্টেরল এবং ক্যালশিয়াম জমতে থাকে। যে কারণে রক্তনালির দেওয়াল পুরু হতে থাকে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
কম ঘুম
ঘুমের মধ্যে কি হার্ট অ্যাটাক হয়? অনেককেই বলতে শুনবেন, ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু হয়েছে। বয়স্কদের বেশি হয়। তবে কমবয়সিরাও আজকাল বাদ যাচ্ছেন না। ঘুমোবার সময়ে হৃৎস্পন্দনের হার এমনিও কম থাকে, আচমকা যদি তা থেমে যায়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হবে। চিকিৎসকেরা বলেন, ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক সাধারণ সমস্যা নয়। একে বিরলই বলা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’। সাধারণত দেখা যায়, যাঁরা রাতের পর পর জেগে থাকেন বা দিনে চার ঘণ্টারও কম ঘুমোন, তাঁদের এই ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অনিয়মিত ঘুম বা অনিদ্রার সমস্যা থাকলে, হৃদ্পেশির সঙ্কোচন এবং প্রসারণ অনিয়মিত হয়, ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। আবার স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলেও ঝুঁকি বেশি। স্লিপ অ্যাপনিয়া এমন একটি অবস্থা, যেখানে ঘুমের সময় বারবার শ্বাসপ্রশ্বাস সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। প্রতি বার অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ বাড়ে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
রক্তে অধিক শর্করা
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে এথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। এ ক্ষেত্রে ধমনীর দেওয়ালের মধ্যে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমতে থাকে, যাকে বলে ‘প্লাক’। এর ফলে ধমনী সঙ্কীর্ণ হয়ে রক্তপ্রবাহকে বাধা দিতে পারে। এই ব্লকেজ থেকেই স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থাকে। খুব বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার, নরম পানীয়, দোকান থেকে কেনা এনার্জি ড্রিঙ্ক, কেক-পেস্ট্রি বেশি খেলে এর ঝুঁকি বাড়ে। অনেকেই প্যাকেটজা ফলের রস, হেল্থ ড্রিঙ্ক কিনে খান। এগুলিও হার্টের জন্য নিরাপদ নয়।