কর্মজগতে উৎপাদনশীলতা বাড়ূবে কী ভাবে? ছবি: সংগৃহীত।
রাত করে বাড়ি ফিরে খেয়ে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতে না দিতেই সকাল। তার পর ঘরের কাজ সেরে ছুটতে ছুটতে অফিস। একের পর এক মিটিং, মেল, প্রেজ়েন্টেশন কিংবা পেশা অনুযায়ী নানা রকম ব্যস্ততা। বিশেষত কর্পোরেট সংস্কৃতির বাড়বাড়ন্তে কাজের চাপে নাভিঃশ্বাস উঠছে সকলেরই।
একই সঙ্গে একাধিক কাজও করতে হচ্ছে। তবে বিজ্ঞান বলছে, ক্রমাগত একের পর এক কাজ করে যাওয়ার জন্য মস্তিষ্ক মোটেই তৈরি থাকে না। আর ঠিক সেই কারণেই একটা সময়ের পর ভীষণ বিরক্তি যেমন হয়, তেমনই কাজে মনঃসংযোগেরও সমস্যা হয়। তাই দরকার সাময়িক বিরতির। কিন্তু কত ক্ষণ?
কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিধি যেমন বদলাচ্ছে, তেমনই মনঃসংযোগের ক্ষমতা বৃদ্ধি, কী ভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়তে পারে, তা নিয়েও চলছে নানা রকম সমীক্ষা, গবেষণা। তৈরি হচ্ছে একাধিক নিয়ম। কত ক্ষণ টানা কাজ করা যায়, আর কত ক্ষণই বা বিরতি দরকার, তা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা রকম নিয়ম-নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। তারই মধ্যে একটি হল ৪৫:১৫ নিয়ম।
এই নিয়ম বলছে, কেউ একটানা ৪৫ মিনিট মনঃসংযোগ করতে পারেন। তার পরেই বিক্ষিপ্ত হতে থাকে মনোযোগ। তাই ৪৫ মিনিট কাজ করার পরে ১৫ মিনিটের বিরতি দরকার। ৪০ মিনিট কাজ করলে বিরতি নেওয়া দরকার ১২ মিনিট, ৬০ মিনিট কাজ করে ২০ মিনিট।
আসলে নানা ধরনের গবেষণায় স্পষ্ট একটানা কাজ করার জন্য মস্তিষ্কও প্রস্তুত থাকে না। বরং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য মস্তিষ্কেরও বিশ্রাম প্রয়োজন। অতীতে একাধিক গবেষণা এবং সমীক্ষা কাজের মাঝে বিরতি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।
মনঃসংযোগ এবং বিরতির নেপথ্যে কোন কারণ?
শরীরের একটি নির্দিষ্ট ঘড়ি আছে। সেই ঘড়ি ধরে শরীর বোঝে কখন কাজ করতে হবে এবং ঘুমোনোর দরকার। সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের সঙ্গে এই ঘড়ি সম্পর্কিত। তেমনই, স্নায়ুগবেষকরা বলেন, মস্তিষ্কও এমন একটি ছন্দ বা ঘড়ি ধরে চলে, যাকে বলা হয় আলট্রাডিয়ান রিদম। রাত এবং দিনে মস্তিষ্ক ৯০-১২০ মিনিটের একটি চক্র অনুসরণ করে। দিনের বেলা এই চক্রের শুরুর দিকে প্রায় ৬০-৯০ মিনিট সময় কারও মনোযোগ এবং সৃজনশীলতা সর্বোচ্চ স্তরে থাকে। এর পর প্রায় ২০ মিনিটের জন্য বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। কারণ, তখন মনোযোগ কমে যায়, ক্লান্তি বোধ হয়। বিরতি নিলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা আবার ফিরে আসে।
৪৫-১৫ নীতি বলছে, ১৫ মিনিট যদি হাত-পায়ের জড়তা কাটাতে একটু স্ট্রেচিং করা যায়, হাঁটাহাটি করা হয় কিংবা জানলা দিয়ে বাইরের দিকে খানিক ক্ষণ তাকিয়েও থাকা যায়, তাতেও মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। তবে ২০২৩ সালে ‘সায়েন্স ডিরেক্ট’-এর গবেষণালব্ধ ফল বলছে, বিরতির সময় মোবাইল ঘাঁটলে, মেল দেখলে চলবে না। কী ভাবে সেই বিশ্রাম নেওয়া হচ্ছে, সেটি জরুরি।
কী ভাবে এই নিয়ম অনুসরণ করা যায়?
· কাজের ক্ষেত্রে ৪৫ মিনিট সময়সীমা নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। কোনও মিটিং আছে, বা প্রজেক্টের কাজ, ৪৫ মিনিট পরে অ্যালার্ম সেট করে রাখা যেতে পারে।
· বিরতির সময়টাও ঘড়ি ধরে চলতে পারেন। এই সময় মেল, মেসেজ, অফিসের হোয়াটস অ্যাপ সবটাই এড়িয়ে চলুন। এই সময় চা-কফি খাওয়া যেতে পারে, সহকর্মীদের সঙ্গে কাজের বাইরে গল্প হতে পারে।
· শরীরের দিকে নজর দিতে হলে মিনিট ১০ হেঁটে নিতে পারেন। পরিবারের কারও সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলেন নিন। সন্তানের খোঁজ-খবরও নিতে পারেন।
· দিনে তিন-চার বার এই ভাবে কাজ করুন এবং বিরতি নিন।
তবে ঘড়ি ধরে ৪৫ মিনিট টানা কাজ করা সব সময় সম্ভব না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে টানা এক ঘণ্টা কাজ করলে বিরতির সময় বাড়িয়ে নিন। ৪০ মিনিট কাজ করলে বিরতির সময় কমিয়েও নিতে পারেন। নিজের সুবিধা মতো এই সময়সীমা নির্দিষ্ট করতে হবে।
উপকারিতা
· মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়লেও, চাঙ্গা হয়ে ওঠার সময় পাবে।
· বিরতির সময় হাঁটলে বা স্ট্রেচিং করলে শরীর ভাল থাকবে।
· পুষ্টিকর পানীয় বা তরল খাবার খেলে জলের জোগান পর্যাপ্ত থাকবে।
· কাজে ভুল হওয়ার ঝুঁকি কমবে।