কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে উপকারী হলুদ? কখন এ নিয়ে সাবধানতা জরুরি? ছবি: সংগৃহীত।
খালি পেটে এক টুকরো কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেলে শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকে, বলেন বয়স্কেরা। অনেকে ছেলেমেয়েদের সেই অভ্যাসও করাতেন। আসলে গুণের জন্যই হলুদের কদর। ‘মহৌষধ’ হিসাবেও এই ভেষজকে দেখেন অনেকে।
এর মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন নামে এক উপাদান, যা একাই একশোর বেশি রোগ সারাতে পারে। হাজারেরও বেশি বছর ধরে এশিয়ায় হলুদের ব্যবহার শুধু মশলা হিসাবে নয়, ঔষধি হিসাবেও। হলুদ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আর্থ্রাইটিস,অ্যাজ়মা, হার্টের রোগ, অ্যালঝাইমার, ডায়াবেটিস এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধেও কারকিউমিনের উপকারী গুণ কাজে আসে বলে শোনা যায়। কিডনি ভাল রাখতেও হলুদ উপকারী বলে গবেষণা।
সেই কারণেই কি হলুদের সাপ্লিমেন্ট খাচ্ছেন? সকালের ডায়েটে জুড়ছেন হলুদ শট? হলুদ শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বৃদ্ধি করে না, তা কিডনির জন্যও ভাল, বলছে গবেষণা। ২০২৩ সালে ‘সায়েন্স ডিরেক্ট’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র বলছে, কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে, যাতে কিডনিতে সংক্রমণ না হয়। তবে তা সত্ত্বেও কখনও কখনও হলুদও কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘হলুদে অক্সালেটের মাত্রা বেশি থাকে। অক্সালেট এমন এক যৌগ যা বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উপাদানে স্বাভাবিক ভাবেই মেলে। অক্সালেট ক্যালশিয়ামের সঙ্গে জুড়ে কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ফলে কিডনিতে যাঁদের এক বার পাথর হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত হলুদ খাওয়ার প্রবণতা এবং সাপ্লিমেন্ট সমস্যা তৈরি করতে পারে।’’
ভারতীয় হেঁশেলে মশলা হিসাবে হলুদের ব্যবহার দীর্ঘ দিনের। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, খাবারে যেটুকু হলুদ দেওয়া হয়, তাতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং এর অনেক স্বাস্থ্যকর উপযোগিতা রয়েছে। একজন সুস্থ ব্যক্তি দৈনিক ৫০০-১০০০ মিলিগ্রাম কারকিউমিন খেতে পারেন। তবে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলেই বাড়তে পারে বিপদ।
অনেকেই কারকিউমিনের পুষ্টিগুণ পেতে হলুদের পানীয় বা শট খান। বাজারচলতি কারকিউমিন সাপ্লিমেন্টও পাওয়া যায়। তবে বেশি পরিমাণ, কারকিউমিন নানা রকম সমস্যা ডেকে আনতে পারে বলছেন পুষ্টিবিদেরা। এতে হজমের গোলমাল, পেট ব্যথা হতে পারে। কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
কখন হলুদ নিয়ে সতর্কতা জরুরি?
অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘হলুদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে। সাধারণত মশলায় যে টুকু খাওয়া হয় তাতে কোনও সমস্যা নেই। তবে কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা থাকলে, কিডনির অসুখ বা কার্যক্ষমতা নিয়ে সমস্যা থাকলে হলুদ মাত্রাতিরিক্ত খেলে সমস্যা হতে পারে।’’