ক্যানসার হবেই না, তার সম্ভাবনাই মিটিয়ে দেবেন বিজ্ঞানীরা। ফাইল চিত্র।
মারণ কর্কট শরীরে থাবা গেড়ে বসার আগেই সুরক্ষাকবচ বানিয়ে ফেলবেন বিজ্ঞানীরা। রোগ হওয়ার আগেই তাকে প্রতিরোধ করার উপায় আসবে হাতের মুঠোয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে ক্যানসার চেনার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের দাবি বিজ্ঞানীদের।
ক্যানসার গোড়ায় ধরা পড়লে, তা সারানো যায় অনেক ক্ষেত্রেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে ক্যানসার গোড়ায় শনাক্ত করার নানা পদ্ধতি আবিষ্কারের দাবি করা হয়েছে বহু বার। টিউমার কোষ গজাতে না গজাতেই তার ঠিকুজি বার করে ফেলার নানা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়েই। তবে তা হচ্ছে রোগ শরীরে বাসা বাঁধার পরে, একেবারে প্রাথমিক স্তরে। নতুন যে গবেষণা হচ্ছে, সেখানে রোগ শরীরে বাসা বাঁধার আগেই তার সম্ভাবনা ধরে ফেলবেন বিজ্ঞানীরা। তা হবে একেবারে জিনগত স্তরে গিয়ে। ফলে শুধু যে কর্কট রোগ হওয়ার আশঙ্কা ধরা পড়বে, তা নয়। জিনগত নানা রোগ, অটোইমিউন কিছু রোগও চেনা যাবে আগে থেকেই। এই গোড়ায় গলদ ধরার পদ্ধতিই আবিষ্কারের দাবি করেছেন আমেরিকার জন্স হপকিন্স কিমেল ক্যানসার সেন্টার ও জন্স হপকিন্স হোয়াইটিং স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চের বিজ্ঞানীরা।
এআই কী ভাবে ক্যানসার চিনবে?
রক্ত, সিরামে ভাসমান টুকরো টুকরো ডিএনএ হবে অস্ত্র। রক্তের নমুনা নিয়ে সেখানে ডিএনএ-র তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখবেন, এমন কোনও জিন আছে কি না, যার রাসায়নিক বদল (মিউটেশন) হয়ে ক্যানসার কোষের জন্ম হতে পারে। এই ডিএনএ-র টুকরোগুলিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘সার্কুলেটেড সেল-ফ্রি ডিএনএ’ (সিসিএফডিএনএ)। যে পদ্ধতিতে ডিএনএ-র খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করবেন বিজ্ঞানীরা, সেটি হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। সে পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাইট’ (মাল্টিডাইমেনশনাল ইনফর্মড জেনেরালাইজ়ড হাইপোথেটিক টেস্টিং)।
গবেষকেরা মূলত ‘লিকুইড বায়োপসি’-র পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়েছেন। টিস্যু বায়োপসি, এক্স-রে অথবা এমআরআই স্ক্যানের থেকেও অনেক বেশি নিখুঁত ভাবে ক্যানসার চিহ্নিত করতে পারে লিকুইড বায়োপসি। বিজ্ঞানীদের দাবি, এতে ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। টিস্যু বায়োপসি মানে হল আক্রান্ত জায়গা থেকে কোষের কিছুটা নমুনা নিয়ে সেটা পরীক্ষা করা। কিন্তু লিকুইড বায়োপসির পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। রক্তের মধ্যে ক্যানসার কোষ রয়েছে কি না বা থাকলেও সেগুলির গতিবিধি কেমন, তা জানতে বিশেষ এক ধরনের জেনেটিক মার্কার ব্যবহার করা হয়। এই জেনেটিক মার্কার তৈরি হয় ডিএনএ দিয়ে। ক্যানসার কোষ বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী জিনের সংস্পর্শে এলেই সেই মার্কারের চেহারা বদলে যাবে। তা দেখেই ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না বা ক্যানসার শরীরে বাসা বেঁধেছে কি না, তা ধরা পড়বে। এই পদ্ধতি জটিল ও এর নানা ধরন আছে। জন্স হপকিন্সের বিজ্ঞানীরা লিকুইড বায়োপসিরই আরও উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কারের দাবি করেছেন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যও নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ১০০০ জনের উপর পরীক্ষা হয়েছে। গবেষকেরা দাবি করছেন, এই পদ্ধতি যদি সফল হয়, তা হলে মারণ রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব হবে। ক্যানসার নির্মূল করার আরও উন্নত চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়েও গবেষণা করা সম্ভব হবে।