শিশুর এগজ়িমার লক্ষণ বড়দের মতো নয়, কী কী খেয়াল করবেন? ছবি: ফ্রিপিক।
ত্বকে চুলকানি, র্যাশ বা এগজ়িমার সমস্যা যে শুধু বড়দের হয়, তা নয়। ছোটরাও ভোগে এগুলিতে। তবে একেবারে নবজাত শিশু বা জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে এগজ়িমার মতো চর্মরোগ হওয়ার ঘটনাকে বিরল বলেই মনে করা হত এক সময়ে। কিন্তু ইদানীং এই সমস্যাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’, ‘ন্যাশনাল এগজ়িমা সোসাইটি’ থেকে এবং ‘নেচার’ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত কিছু গবেষণাপত্রে তেমনই জানানো হয়েছে। শিশুদের মধ্যেও চর্মরোগের প্রকোপ বাড়ছে। এর কারণ যেমন জিনগত, তেমনই পরিবেশগতও বটে।
ত্বকে জ্বালা, ত্বক ফেটে যাওয়া, চুলকানি, ত্বক শুকিয়ে খসখসে হয়ে যাওয়া, কখনও আবার বড় বড় ফোস্কা পড়া এগজ়িমার লক্ষণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এরই নাম ‘অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস’। ‘জামা’ মেডিক্যাল জার্নালেও বিষয়টি নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, গত কয়েক বছরে সদ্যোজাত শিশু বা বয়স ১ বছর বা ২ বছর হয়েছে, এমন শিশুরাও অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিসে ভুগছে। এগজ়িমাকে সাধারণ র্যাশ ভেবে ভুলও করছেন বাবা-মায়েরা। ফলে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না।
কেন হতে পারে এগজ়িমা
এই সমস্যার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। অনেক চিকিৎসক মনে করেন, জিনগত এবং পরিবেশগত কারণের সমন্বয়েই এই অসুখ হয়। বাবা-মায়ের কারও এই সমস্যা থাকলে, সন্তানেরও হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মা যদি খুব বেশি পরিমাণে ভাজাভুজি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খান, তাঁর নেশা করার অভ্যাস থাকে অথবা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট নেন, তা হলে সন্তানের চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। হরমোনের ওঠানামা, বিশেষ কোনও ওষুধ খাওয়ার কারণেও এমন হতে পারে। মায়ের যদি অ্যালার্জির ধাত থাকে, এবং তার জন্য ওষুধ খান, তা হলেও সে সবের প্রভাব পড়তে পারে সন্তানের উপরে। পরিবারে হাঁপানি, অ্যালার্জি বা এগজ়িমার ইতিহাস থাকলেও তা শিশুর মধ্যে দেখা দিতে পারে।
বাবা-মায়েরা কী কী লক্ষণ খেয়াল করে সতর্ক হবেন
গাল, থুতনি, কানের পিছন দিকে লালচে র্যাশ হতে পারে। পেট, কনুই, ঊরুতেও বড় বড় ফোস্কা পড়বে অথবা ঘামাচির মতো দেখা যাবে। মাথার ত্বকে র্যাশ হতে পারে। চামড়া খসখসে এবং পুরু হয়ে যাবে। বেশির ভাগ অভিভাবকই একে সাধারণ র্যাশ বলে এড়িয়ে যান। সংক্রমণের জায়গায় বাজারচলতি ক্রিম বা পাউডার লাগিয়ে দেন, ফলে সমস্যা তো কমেই না, উল্টে আরও বেড়ে যায়।
এগজ়িমার র্যাশ দিনে দিনে বাড়তে থাকে। সেখানে চুলকালে বা ঘষলে, তা আরও ছড়াবে। ছোটদের তাই বেশি সাবধানে রাখতে হবে। ঘুমের মধ্যেও যদি শিশু র্যাশের জায়গায় বেশি চুলকে ফেলে, তা হলে জ্বালাযন্ত্রণা আরও বাড়বে।অভিভাবকেরা যদি দেখেন শিশুর ত্বকে এমন র্যাশ হচ্ছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ঘরোয়া উপায়েও ত্বকের জ্বালা কমানো যেতে পারে। কী কী করতে হবে?
· ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করাতে হবে শিশুকে। নরম সুতির জামা পরাতে হবে।
· শিশুর জামাকাপড় সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
· শিশুর সাবান যেন মৃদু প্রকৃতির হয়। অর্থাৎ তীব্র ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা চলবে না।
· সব সময় হাতের নখ যেন ছোট করে কাটা থাকে।
· শিশুকে যে কোনও ময়েশ্চারাইজ়ার মাখাবেন না, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ময়েশ্চারাইজ়ার কিনবেন।