Leptospirosis Infection

জমা জলে সংক্রমণের ভয়? নোংরা জল থেকে লেপ্টোস্পাইরোসিস ছড়াতে পারে, সতর্ক থাকবেন কী ভাবে?

প্রতি বছর এই রোগের প্রকোপ বাড়ে দেশের নানা জায়গায়। সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুও হয়। তাই বৃষ্টির দিনে এই রোগটি নিয়ে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৩৪
Share:

জমা জলে থিকথিক করছে সংক্রামক ব্যাক্টেরিয়া, কী কী সতর্কতা নেবেন? ছবি: সংগৃহীত।

রাতভর বৃষ্টিতে জলমগ্ন কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা। জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একের পর মৃত্যুর খবর আসছে। জমা, নোংরা জল থেকে আবার সংক্রমণের ভয়ও আছে। এর আগে মুম্বইতে জমা জল থেকে সংক্রামক লেপ্টোস্পাইরোসিস রোগ ছড়াতে শুরু করেছিল। তাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বহুজন। প্রতি বছর এই রোগের প্রকোপ বাড়ে দেশের নানা জায়গায়। সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুও হয়। তাই বৃষ্টির দিনে এই রোগটি নিয়ে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হচ্ছে।

Advertisement

লেপ্টোস্পাইরোসিস নিয়ে কেন সতর্ক করা হচ্ছে?

‘লেপ্টোস্পাইরা ইন্টেরোগ্যানস’ ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকেই হয় এই রোগ। কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর মল-মূত্র থেকে সংক্রমণ ঘটে। রোগটি এমনিতে খুব পরিচিত নয়। তাই এই নিয়ে সচেতনতাও কম। সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, এই রোগ প্রধানত ইঁদুর, ছুঁচো বা বেজি ইত্যাদি প্রাণীর বর্জ্য পদার্থ থেকে ছড়ায়। সাধারণত এই সব প্রাণীরা মাটিতেই তাদের বর্জ্য ত্যাগ করে। বর্ষার সময় তা জলে মিশে যায়। ফলে জমে থাকা জল থেকেই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।

Advertisement

কী রোগ হয়?

জমা জল থেকে শরীরে ঢোকে এই ব্যাক্টেরিয়া। তার পর খুব দ্রুত সংখ্যায় বাড়তে থাকে।জমা জল পেরিয়ে এসে যদি ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হন, তা হলে এই জীবাণুর সংক্রমণ ঘটবে দ্রুত। সবচেয়ে আগে জ্বর আসবে। সেই সঙ্গে হাতে পায়ে তীব্র যন্ত্রণা হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করলে তবেই এই রোগ ধরা পড়বে। সাধারণ ভাবে এই রোগ ধরা যাবে না।

লেপ্টোস্পাইরোসিস রোগটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে লিভার ও কিডনি বিকল হতে পারে। নাক দিয়ে, মাড়ি দিয়ে, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বার হতে পারে। সেই সঙ্গেই ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটবে। মেনিনজাইটিসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ, মস্তিষ্কে প্রদাহ হবে, রোগীর খিঁচুনিও হতে পারে।

কী ভাবে সতর্ক থাকবেন?

১) জমা জলে খালি পায়ে যাতায়াত করবেন না। পায়ে ক্ষত থাকলে বা পায়ের ত্বক শুষ্ক ও ফাটা থাকলে সেখান দিয়ে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ঘটবে দ্রুত। অনেকেই জুতো খুলে জমা জল পেরোন, সে ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।

২) বাইরে থেকে ফিরেই হাত-পা ভাল করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। তার পর স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন।

৩) রাস্তায় যে পোশাক পরে বেরোচ্ছেন তা পরিষ্কার করুন। ভেজা ও অপরিষ্কার পোশাক বাড়িতে ফেলে রাখবেন না। তাতেও সংক্রমণের ভয় থাকবে।

৪) এই সময়ে রাস্তায় বিক্রি হওয়া খাবার, লস্যি-নরম পানীয়, শরবত একেবারেই খাবেন না।

৫) জল পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর পর ভেজা জুতো পায়ে দীর্ঘ সময় রাখবেন না। চটি বা স্যান্ডেল হলেও পা থেকে খুলে রাখবেন।

প্রথমেই জমা জল এড়িয়ে চলতে হবে। অনেক সময়ে জমা জল পেরোনোর জন্য জুতো হাতে নিয়ে খালি পায়েই যাতায়াত করেন অনেকে। ফলে পায়ের ফাটা অংশ বা কাটাছেঁড়ার জায়গা দিয়েই এই জল শরীরে প্রবেশ করে। তাই বর্ষার সময়ে কখনওই খালি পায়ে জমা জলে হাঁটবেন না। আর যতটা পারেন জমা জল এড়িয়ে চলুন।

বাইরে থেকে ফিরলে হাত ও পা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। হাত স্যানিটাইজ় করে তবেই খাবার খাবেন।

জল ফুটিয়ে খাওয়াই ভাল। রাস্তায় বিক্রি হওয়া শরবত বা নরম পানীয় খাবেন না।

রাস্তায় যে পোশাক পরে বেরোচ্ছেন, তা ভাল করে পরিষ্কার করতে হবে। অপরিচ্ছন্ন পোশাক ঘরে রেখে দেবেন না।

লেপ্টোস্পাইরোসিসের চিকিৎসা অ্যান্টিবায়োটিকে হয়। তবে নিজে থেকে ওষুধ খেতে যাবেন না। যদি দেখেন, জ্বর কমছে না, ঘন ঘন বমি হচ্ছে, নাক দিয়ে রক্ত বার হচ্ছে অথবা জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হচ্ছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement