পুজোর আগে মায়ের কী কী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেবেন? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। বয়স্ক মানুষদের জন্য তা আরও কঠিন হতে পারে। তাই বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তাঁরা সুস্থ, সুখী এবং নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারেন। একরাশ আনন্দ নিয়ে পুজো আসছে। কেনাকাটা জোরকদমে চলছে। মাকে কোন শাড়িটি কিনে দেবেন, তা ভেবে রেখেছেন নিশ্চয়ই। প্রতি বারের মতো মায়ের জন্য কেনাকাটার সময়ে খেয়াল রাখবেন, শুধু উপহার দেওয়া নয়, মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও কিন্তু জরুরি। বয়সকালে নানা রোগব্যাধি মাথাচাড়া দিতে থাকে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা রকম সমস্যাও দেখা দেয়। তাই এই সময়ে জরুরি ভিত্তিতে কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে রাখতে পারেন। তা হলে পুজোটা নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘ্নেই কাটবে।
মায়ের জন্য কোন কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা অতি জরুরি?
ত্বকের ক্যানসার
‘বেসিক স্কিন ক্যানসার স্ক্রিনিং টেস্ট’ করিয়ে রাখা খুব জরুরি। এই বয়সে মেলানোমা বা ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেকেই এই পরীক্ষাটি করান না। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেন, বয়স্কদের জন্য এই স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুবই জরুরি।
প্যাপ টেস্ট
জরায়ুমুখের ক্যানসার চিহ্নিত করতে প্যাপ টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জরায়ুমুখ থেকে কোষের নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের নীচে পরীক্ষা করা হয়। দেখা হয়, কোষের অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত বিভাজন হচ্ছে কি না। বয়স্কদের জন্য এই পরীক্ষা করানো খুবই জরুরি। প্রতি তিন বছর অন্তর এই পরীক্ষা করিয়ে নিলে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। জরায়ুমুখের ক্যানসার একেবারে প্রাথমিক পর্বে ধরা পড়লে তার নিরাময় সম্ভব।
ম্যামোগ্রাম
স্তন ক্যানসার শনাক্ত করতে এই পরীক্ষা খুবই জরুরি। ম্যামোগ্রাম হল বিশেষ ধরনের এক্স-রে, যা স্তনের কোষের অনিয়মিত বৃদ্ধি হচ্ছে কি না, তার রিপোর্ট দিতে পারে। স্তনের ভিতর গজিয়ে ওঠা মাংসপিণ্ড বা টিউমার শনাক্ত করতেও এই পরীক্ষাটি জরুরি। প্রতি ১ থেকে ২ বছর অন্তর এই টেস্ট করিয়ে রাখা ভাল।
লিপিড প্রোফাইল টেস্ট
রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে কি না, তা জানতে লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করিয়ে রাখতেই হবে। প্রতি বছরই এই পরীক্ষা করানো ভাল।
ব্লাড সুগার
রক্তে শর্করা বাড়ছে কি না, তা বুঝতে ডায়াবিটিসের কিছু পরীক্ষা করাতেই হবে। যেমন, হিমোগ্লোবিন এ১সি, এইচবিএ১সি, ওরাল গ্লুকোজ় টলারেন্স টেস্ট (ওজিটিটি) পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
হার্টের পরীক্ষা
হার্টের রোগ থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। না হলে ইসিজি, ইকোকার্ডিয়োগ্রাম, করোনারি অ্যাঞ্জিয়োগ্রাম, করোনারি ক্যালশিয়াম স্কোরিং, ক্ষেত্র বিশেষে এমআরআই করিয়ে রাখা ভাল।
চোখের পরীক্ষা
বয়স ৫০ পার হলেই ‘ম্যাকুলার ডিজেনারেশন’ (এমডি)-র ঝুঁকি বাড়ে অনেকের। এতে রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমা— এই দুই রোগে দেশে প্রতি বছর বহু মানুষ আক্রান্ত হন। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা সারিয়ে তোলা যায়। তাই চোখের পরীক্ষা খুবই জরুরি। চোখের আরও একটি অসুখ নিয়ে সাবধান থাকতেই হবে, তা হল গ্লকোমা। অপটিক স্নায়ুতে চাপ বাড়লে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করে, পরবর্তী সময়ে যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনট্রাঅকুলার প্রেসার টেস্ট, কালার ভিসন টেস্ট, অপটিকাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি-সহ আরও কিছু পরীক্ষা করাতে হবে।
হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা
মহিলাদের রজোনিবৃত্তির পর হাড়ের ক্ষয় খুব বেশি হয়। এই সময়ে হাড় ভঙ্গুর বা দুর্বল হয়ে যাওয়া বা অস্টিয়োপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাই হাড়ের ঘনত্ব কেমন, তা বোঝার জন্য ‘ডেক্সা স্ক্যান টেস্ট’ করা খুব জরুরি।
ভিটামিন ডি ও বি১২ টেস্ট
বয়স্কদের এই ভিটামিনগুলির অভাব বেশি হয়, ফলে হাড়ের দুর্বলতা, ক্লান্তি, স্নায়বিক নানা সমস্যা দেখা দেয়।
কোলোনোস্কোপি
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের শিকার এখন অনেকেই। বিশেষ করে, বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। যদি আইবিএস থাকে, তা হলে খাদ্যনালিতে টিউমার আছে কি না, তার পরীক্ষা করিয়ে রাখা ভাল। পাশাপাশি, কোলোনোস্কোপিও করিয়ে রাখতে হবে।