‘অ্যাডাল্ট টামি টাইম’ কী? কী ভাবে করলে উপকার পাবেন? ছবি: ফ্রিপিক।
হাঁটতে চলতে ঘাড় নিচু আর চোখ মোবাইল ফোনে। প্রতি দিন রাস্তায় বেরোলে এমন চলার ভঙ্গিমা প্রায়ই দেখা যায়। শুধু পথেঘাটেই নয়, বাসে-ট্রেনে-ঘরোয়া আড্ডায়-অফিসে সর্বত্রই ঘাড় গুঁজে মোবাইলের কি-প্যাডে টাইপ নয়তো নেট সার্ফ। বাইরের জগতের সঙ্গে যেন কোনও সংযোগই নেই। এটাই এখন জীবনচর্চায় পরিণত হয়েছে। আর তার হাত ধরেই নতুন অসুখ হানা দিচ্ছে। কারও পিঠে ব্যথা, কারও ‘টেক নেক’ বা ‘টেক্সট নেক’, কারও কব্জিতে যন্ত্রণা। ঘাড় গুঁজে মোবাইল দেখার অভ্যাস কত যে ক্ষতিকর, মেরুদণ্ডের গঠনে কতটা বদল আনছে, তা নিয়ে চিকিৎসক মহলে উদ্বেগের শেষ নেই। এর থেকে বাঁচতে নতুন এক পন্থার কথা বলছেন চিকিৎসক, গবেষকেরা, তা হল ‘অ্যাডাল্ট টামি টাইম’।
শব্দবন্ধটি নতুন। তবে এই নিয়ে এখন চর্চা বেশি হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বসে বা দাঁড়িয়ে ঘাড় নিচু করে একটানা মোবাইল না দেখে, বরং উপুড় হয়ে পেটে চাপ দিয়ে শুয়ে স্ক্রল করুন। যদি মোবাইল বা ট্যাবে একটানা দীর্ঘ সময় কাজ করতেই হয়, তা হলে উপুড় হয়ে ভুজঙ্গাসনের ভঙ্গিতে তা করাই ভাল। এতে পিঠে, কাঁধে ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি কমে, ঘাড় নিচু করে থাকতে থাকতে কুঁজো হওয়া বা ঝুঁকে হাঁটার প্রবণতা কমে। পাশাপাশি, শরীরের ভারসাম্যও ঠিক থাকে। এই বিশেষ ভঙ্গিমাকেই বলা হচ্ছে ‘অ্যাডাল্ট টামি টাইম’।
‘টেক নেক’ থেকে বাঁচার উপায় ‘টামি টাইম’!
মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার, সারা ক্ষণ ঘাড় নিচু করে স্ক্রিনের দিকে চোখ, এ সব উপসর্গ দেখে এই অভ্যাসের জেরে হওয়া অসুখকে ‘টেক্সট নেক’ নামেই ডাকা হচ্ছে। কেউ বলছেন ‘টেক নেক’। এই অসুখে মেরুদণ্ড চিরতরে বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ঘাড়-গলার হাড় ও স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে তার ক্ষতিও হতে পারে। সোজা অবস্থায় মেরুদণ্ডকে কোনও বাড়তি ওজন বহন করতে হয় না। কিন্তু যখনই ঘাড় ও গলা ঝুঁকে যায়, ততই ঘাড়-গলাকে বাড়তি ওজন বইতে হয়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে মেরুদণ্ডে। শিশুদের ক্ষেত্রেও এই অসুখ বেশি দেখা যাচ্ছে। সারা ক্ষণ মাথা ঝুঁকিয়ে মোবাইলে গেম খেলার কারণে, ছোট থেকেই স্পন্ডিলোসিসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
ঘাড় নীচে ঝুঁকিয়ে নয়, বরং মাথা তুলে ঘাড় টানটান করে রাখতেই ‘টামি টাইম’ ভঙ্গিমার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ঠিক যেমন ভুজঙ্গাসন করা হয়, তেমনই। উপুড় হয়ে শুয়ে প্রথমে দুই হাতের উপর মাথা রেখে মিনিট পাঁচেক শরীরকে বিশ্রাম দিন। এতে শরীরের প্রতিটি পেশির বিশ্রাম হবে। এর পর বুক থেকে শরীর তুলে মাথা সোজা টানটান রাখুন। খেয়াল রাখবেন, নাভি যেন মাটি থেকে ৩ ইঞ্চি উপরে ওঠে। মোবাইল দেখতে হলে ওই ভঙ্গিতেই দেখুন। এতে মেরুদণ্ডের ভঙ্গিমা ঠিক থাকবে। পাশাপাশি, কাঁধ, পিঠ ও হাতের পেশির স্ট্রেচিংও হবে।