পিত্তথলিতে আট হাজারের উপর পাথর হল কী ভাবে? ছবি: সংগৃহীত।
পিত্তথলিতে পাথর জমার সমস্যা নতুন নয়। অনেকেরই তা হয়, এবং অস্ত্রোপচার করে তা বারও করা হয়। পিত্তথলিতে পাথর জমা খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু গুরুগ্রামে এক বৃদ্ধের সঙ্গে যা ঘটেছে, তাকে আর ঠিক পরিচিত অবস্থা বলা যায় না। বরং বিরলের মধ্যে বিরলতমই বলছেন চিকিৎসকেরা। আর হবে না-ই বা কেন, পিত্তথলিতে একসঙ্গে আট হাজার পাথর জমার কথা কে-ই বা আগে শুনেছে! একসঙ্গে ২০০-৩০০টি পাথর মানেই তা বিরল অবস্থা। পিত্তথলি ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। সেখানে ৭০ বছরের এই বৃদ্ধের অবস্থা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
বুকে, পেটে যন্ত্রণা নিয়ে গুরুগ্রামের এক হাসপাতালে ভর্তি হন গুরুগ্রামের বাসিন্দা সেই বৃদ্ধ। পিত্তথলিতে পাথর হলে পেটে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা হয়, বমি ভাব থাকে। বৃদ্ধের সেখানে বুকেও ব্যথা হচ্ছিল, সেই সঙ্গেই শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল। চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন হৃদ্রোগ। কিন্তু পরে আলট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখা যায়, পিত্তথলিতে জট পাকিয়ে জমে রয়েছে হাজার হাজার পাথর। এই অবস্থায় কাটাছেঁড়া করে অস্ত্রোপচার করার ঝুঁকি নেননি চিকিৎসকেরা। বরং ‘ইনভেসিভ ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি’ করেছেন। এতে পিত্তথলি থেকে একবারে ৮১২৫টি পাথর বেরিয়েছে।
৬-৭ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার হয়েছে বৃদ্ধের। ল্যাপারোস্কোপিতে পেট কেটে অস্ত্রোপচার হয় না। বরং ছোট ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে ক্যামেরা এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি পেটের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। অপারেশন কক্ষে থাকা মনিটরে বহু গুণ বড় করে যে অংশের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে, তা দেখার সুযোগ থাকে। এতে অনেক ভ্রান্তি এড়ানো যায় বলেই দাবি করেন চিকিৎসকেরা।
সাধারণত অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, হরমোনের গোলমাল, কোলেস্টেরলের বাড়বাড়ন্ত, দীর্ঘ ক্ষণ না খেয়ে থাকা পিত্তথলিতে পাথর জমার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা, অ্যালকোহলের কারণেও পিত্তথলিতে পাথর জমে। পিত্তথলি থেকে যে পিত্তরস বেরোয়, তার পরিমাণের হেরফের হয়। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও বিলিরুবিন জমা হলে পিত্তরস ঘনীভূত হয়ে ক্রিস্টালের মতো আকার নেয়।
পিত্তথলিতে পাথর জমছে কি না, তা কিছু লক্ষণে বোঝা যেতে পারে। যেমন পেটের উপরের অংশের ডান দিকে ব্যথা শুরু হয়। সেটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পেটব্যথার সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বরও আসে অনেকের। সেই সঙ্গে ঘন ঘন বমি হতে থাকে। অনেক সময় পিত্তথলিতে পাথর জমতে শুরু করলে হেপাটাইটিসেরও সংক্রমণ হয়। তাই পেটব্যথা, বমি যদি ঘন ঘন হতে থাকে তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বৃদ্ধের ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, তা বিরল অবস্থা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পিত্তথলিতে ক্যানসার হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বৃদ্ধের। সঠিক সময়ে অস্ত্রোপচার না হলে বড় বিপদ হতে পারত।