Effects Bleaching Powder

ব্লিচিং পাউডার দিয়েই কি পরিষ্কার হয় বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক? জীবাণুনাশ করলেও বাড়ে ক্যানসারের ঝুঁকি

ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা কেন বিপজ্জনক? শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে? বিকল্প উপায় কী?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ১৪:১১
Share:

জলের ট্যাঙ্কে ব্লিচিং পাউডার মিশলে কী বিপদ হবে? ছবি: সংগৃহীত।

আবাসনের বড় জলের ট্যাঙ্ক হোক বা বাড়ির ছোট ট্যাঙ্ক, পরিষ্কারের জন্য কি ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয়? ব্লিচিং জীবাণুনাশ করলেও তা শরীরের জন্য বিপজ্জনক। জল পরিশ্রুত করতেও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয় অনেক সময়ে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, জলে ব্লিচিং মিশলে কী ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। আর এর থেকে আরও যে সব রাসায়নিক তৈরি হয়, তা জটিল অসুখের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

Advertisement

দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’ ২০২৩ সাল থেকে ব্লিচিং পাউডারের ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়ে গবেষণা করছে। তা নিয়ে ‘পাব মেড’ জার্নালে ‘ব্লিচ টক্সিসিটি’ নামে গবেষণামূলক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গবেষকেরা জানিয়েছেন, জল পরিশুদ্ধ করতে বা জীবাণুনাশের কাজে ব্লিচিং পাউডারের প্রয়োগ এত বেশি হচ্ছে, যা ক্যানসার, লিভারে বিষক্রিয়া, শ্বাসনালিতে সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠছে। ব্লিচিং পাউডারে থাকে ৩ থেকে ৮ শতাংশ ক্যালশিয়াম হাইপোক্লোরাইট। তা ছাড়া থাকে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড। ব্লিচিং পাউডার যদি অন্য কোনও জীবাণুনাশক তরল বা ভিনিগারের সঙ্গে মেশে তা হলে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস তৈরি করবে। ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের সময়ে ব্লিচিং পাউডারের সঙ্গে নানা রকম জীবাণুনাশক তরলও মেশানো হয়। এতে ক্ষতিকর ক্লোরিন গ্যাস তৈরি হয় যা ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস ধ্বংস করলেও যদি জলের সঙ্গে মানুষের শরীরে ঢোকে তা হলে প্রথমে শ্বাসনালিতে প্রদাহ তৈরি করবে। এর থেকে চোখ, নাক ও ফুসফুসে বিষক্রিয়া শুরু হবে। মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হবে। হাঁপানি বা সিওপিডির রোগী হলে তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠবে।

ব্লিচিং পাউডার খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর জন্য বিষ। ব্লিচিং মিশ্রিত জল যদি কেউ খান, তা হলে তাঁর পাকস্থলীতে প্রদাহ শুরু হবে। দীর্ঘ সময় ধরে পেটে গেলে আলসার হতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের জন্য যা বিপজ্জনক। হার্টের রোগ, কিডনির অসুখ বা কোনও রকম কোমর্বিডিটি থাকলে তা প্রাণসংশয়ের কারণও হয়ে উঠতে পারে।

Advertisement

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ব্লিচিং এমন এক রাসায়নিক যা জলের সংস্পর্শে এলে আরও কিছু ‘ডিজ়ইনফেকশন বাইপ্রোডাক্ট’ (ডিবিপি) তৈরি করে যেগুলির অধিকাংশই ক্যানসারের জন্য দায়ী। যদি জলে অতিরিক্ত ব্লিচিং মেশে, তা হলে রক্তের ক্যানসারও হতে পারে। ব্লিচিং থেকে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।

তা হলে উপায়?

চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধাতব বা প্লাস্টিকের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করলে, তা ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি করে। প্লাস্টিকের সূক্ষ্ম কণা মাইক্রোপ্লাস্টিকের সঙ্গে মিশলে তা আরও বিপজ্জনক। সে ক্ষেত্রে যদি ব্লিচিং ব্যবহার করতেই হয়, তা হলে জলে সামান্য পরিমাণে মেশাতে হবে। সেই জলে অ্যামোনিয়া বা অন্য কোনও রাসায়নিক মেশানো যাবে না। ব্লিচিং মিশ্রিত জল দিয়ে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার পরে, অন্তত বার চারেক তা পরিষ্কার জলে ধোয়াতে হবে। এর পর ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে আবারও জল ফেলে দিয়ে তার পর পরিষ্কার জল ভরতে হবে। কোনও ভাবেই যেন রাসায়নিকের একটি কণাও পরিষ্কার জলে না মেশে।

ব্লিচিং পাউডারের বিকল্প হিসেবে ইউভি ডিজ়ইনফেকশন বা ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা যেতে পারে। অথবা হাইড্রোজেন পারক্সাইড, বেকিং সোডা, ভিনিগার ব্যবহার করা যেতে পারে। অথবা গরম জলে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে তা দিয়ে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করলে আর বিষক্রিয়ার ভয় থাকে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement