এক মাস জিভ পরিষ্কার না করলে কী কী প্রভাব পড়তে পারে শরীরে? ছবি: ফ্রিপিক।
দাঁত নিয়ে যত ভাবনা, তার বিন্দুমাত্র থাকে না জিভ নিয়ে। নিয়ম করে দাঁত মাজেন সকলেই। কিন্তু জিভ পরিষ্কার করেন কি? অথচ চিকিৎসকের কাছে গেলে চোখ দেখার পাশাপাশি তিনি কিন্তু আগে জিভটাই দেখেন। জিভের রং স্বাস্থ্যের ইঙ্গিতবাহী।
চিকিৎসকেরা বলছেন, মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যরক্ষায় দাঁত মাজা যতটা জরুরি, ঠিক ততটাই প্রয়োজন জিভের ময়লা পরিষ্কার করা। বেঙ্গালুরুর দন্তচিকিৎসক বর্তিকা কুমারী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, নিয়মিত জিভ না ছুললে প্রথমেই যেটি হতে পারে, তা হল মুখে দুর্গন্ধ। কারণ, খাওয়ার সময় খাদ্যকণা শুধু দাঁতের ফাঁকে আটকায় না, জিভেও তার পরত পড়ে। আর তাতে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হলে মুখে দুর্গন্ধ হবেই। গবেষণা বলছে, ৭০-৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে মুখের দুর্গন্ধের নেপথ্যে থাকে মুখগহ্বরের অপরিচ্ছন্নতা, অপরিষ্কার জিভ।
এক মাস জিভ পরিষ্কার না করলে আর কোন বদল চোখে পড়বে?
নিয়মিত জিভে খাদ্যকণা জমলে বা মুখগহ্বেরর স্বাস্থ্যরক্ষা না হলে তার প্রভাব পড়ে পেটেও। জিভ সাদা বা হলদেটে হয়ে যাওয়াও অসুস্থতার লক্ষণ। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, জিভের অংশ বিশেষের রং বদলে যেতে পারে নিয়ম মেনে তা পরিষ্কার করা না হলে। কারও কারও ক্ষেত্রে স্বাদেও তফাত হয়। স্বাদকোরক ময়লায় ঢেকে গেলে, আস্বাদনে সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তার চেয়ে বড় কথা, জিভের ময়লার জন্য ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ বাড়লে প্লাক তৈরি হতে পারে। দাঁতের ফাঁকে, মাড়িতে প্লাকের পরত বা হলেদে ময়লা জমে যায় এতে।
বিপদ কোথায়?
মুখগহ্বরের প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ জীবাণু তৈরি হয়। নিয়ম করে দাঁত মাজার পাশাপাশি জিভ না ছুললে, সেই সংখ্যা বাড়তে পারে। চিকিৎসক বর্তিকা জানাচ্ছেন, জিভ পরিষ্কার না করলে জিভে থাকা প্যাপিলাইয়ের আড়ালে অসংখ্য মৃত কোষ, খাদ্যকণা, জমতে পারে। অণুজীব বাসা বাঁধতে পারে। ব্যাক্টেরিয়া, জীবাণু দাঁত এবং মাড়িতেও ছড়িয়ে পড়ে। যা পেটে গেলে শরীরের প্রচণ্ড ক্ষতি হবে। দিল্লির দাঁতের চিকিৎসক বিমল অরোরা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, দাঁত নিয়ে অবহেলা এবং ব্রাশের দিকে নজর না দেওয়া— ডায়াবিটিস থেকে হার্টের অসু্খের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘যখন কেউ দাঁত মাজেন, রোগজীবাণু শরীরে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে না। দাঁত মাজা আসলে হাজার হাজার ব্যাক্টেরিয়া, জীবাণুকে হার্ট বা রক্ত পর্যন্ত পৌঁছতে বাধা দেওয়া।’’
তাই সাধারণ ভাবে জিভ পরিষ্কার না করা ক্ষতিকর মনে না হলেও, তা কিন্তু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
কী ভাবে জিভ পরিষ্কার করবেন?
বড় করে জিভ বার করে জিভছোলা দিয়ে আলতো চাপে ময়লা বার করে দিন। বেশি ঘষাঘষি করা ঠিক নয়। তার পর মুখ কুলকুচি করে ধুয়ে ফেলতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ, দিনে অন্তত এক বার জিভ পরিষ্কার করা দরকার। তবে দু’বার দাঁত মাজার মতো দু’বার জিভ পরিষ্কার করতে পারলে আরও ভাল হয়।