মাচা-য় লুকিয়ে ‘সুুুপার পাওয়ার’! ছবি : ফ্রিপিক।
এমন নয় যে, মাচাকে সদ্য চিনেছেন ভারতীয়েরা। ঘন সবুজ তরল চা ‘মাচা’র সঙ্গে জানাজানি সেই কোভিডের সময় থেকেই। তখন অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর চা হিসাবে জনগণ চিনেছিল মাচাকে। কারণ সেই ‘অন্ধকার’ কালের লক্ষ্য ছিল একটাই— যেনতেনপ্রকারেণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। যা অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু অতিমারিও গত হয়েছে বেশ কয়েক বছর। আচমকাই এই ২০২৫ সালে মাচা নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা। শৌখিনীরা বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে ক্যাফেতে গেলে এখন আর চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি নয়, জাপানি চা মাচা অর্ডার করছেন। কিন্তু চা খাওয়ার ভক্ত কোনও কালেই ছিলেন না যাঁরা, তাঁদের মধ্যে হঠাৎ জাপানি চা নিয়ে মাতামাতি কেন? শুধুই কি স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য?
গবেষণা বলছে, জাপানের এই চায়ে ক্যাটেসিন নামের এক ফ্ল্যাভনয়েড রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যা কি না অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের খনি। আবার প্রদাহনাশকও বটে। অতিরিক্ত প্রদাহ থেকে ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে। আর শরীরের বহু রোগ সামলাতে কার্যকরী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস। সেই কারণেই মাচাকে চায়ের দুনিয়ায় সবচেয়ে উঁচু মানের চা মনে করা হয়। তবে পোল্যান্ডের পোমেরানিয়ান মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ওই গবেষণায় বলা হচ্ছে, শারীরিক উপকারিতার বাইরে নিয়মিত মাচা খাওয়ার মানসিক উপকারিতাও রয়েছে। এমনকি, এই চা ত্বকের জন্যও ভাল। সম্ভবত সেই জন্যই এই চায়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে নয়া প্রজন্মের কাছে এবং শৌখিনীদের দুনিয়াতেও।
ছবি: এআই।
কী কী অন্য রকম গুণ রয়েছে মাচার?
১। ক্লোরোফিল
মাচা চা ছায়ায় হয়। তাই এতে ক্লোরোফিলের মাত্রা বেশি। যার জন্য এর রংও গাঢ় সবুজ। এটি গ্রিন টি-র থেকেও বেশি কার্যকরী। যা শরীর থেকে যাবতীয় ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
২। ক্যানসার প্রতিরোধক
মাচার সবচেয়ে বড় গুণ হল এটি ক্যানসার রোধক। পোল্যান্ডের ওই গবেষণা বলছে, মাচায় থাকা ক্যাটেসিন, ভিটামিন সি, ফেনোলিক অ্যাসিড, ইজিসিজি-র মতো উপাদান কোষে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে দেয় না। টিউমার বাড়তে দেয় না। এটিকে কার্যকরী ক্যানসার প্রতিরোধকারী পথ্য হিসাবে গণ্য করা যায়।
৩। ত্বকের জন্য উপকারী
মাচা নিয়মিত খেলে তা ত্বকে ব্রণ, র্যাশ, ফুস্কুড়ির মতো সমস্যা দূরে রাখে। ত্বক থাকে ঝকঝকে পরিষ্কার। ব্যাক্টেরিয়াজনিত যে সমস্ত সমস্যা ত্বকে প্রভাব ফেলে বা রক্তে টক্সিন জমায় ত্বকের যে ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়, সেই সমস্যাও দূরে রাখে মাচা।
৪। মস্তিষ্ক এবং মন ভাল রাখে
মেধা বৃদ্ধিতে কার্যকরী মাচা। গবেষণায় বলা হচ্ছে, এতে থাকা ইজিসিজি উপাদান চিন্তাশক্তিকে স্বচ্ছ রাখে। ফলে মস্তিষ্কের মেধাবৃত্তির কাজে সুবিধা হয়। শুধু তা-ই নয়, মাচা মনকে উদ্বেগমুক্ত করে শান্ত রাখতেও সাহায্য করে। যা পরিশ্রান্ত মনকে প্রয়োজনীয় বিশ্রামও জোগায়।
ছবি: এআই।
৫। ওজন কমাতে সহায়ক
পোল্যান্ডের ওই গবেষণা বলছে, শর্করা ভাঙতে সহায়ক মাচা। মাচায় থাকা ইজিসিজি, কোয়েরসেটিন এবং ফেনোলিক অ্যাসিড এ কাজে সাহায্য করে। ওই তিন উপাদান লিপিড এবং গ্লুকোজ় শোষণ করে। পাশাপাশি, শরীরের ইনস্যুলিন হরমোনের ক্ষরণে সাহায্য করে তা শর্করা বিপাকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যেহেতু শরীরের মেদ বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ শর্করা, তাই মাচা নিয়মিত খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করবে।