ল্যাপটপ কোলে রাখেন, পকেটে মোবাইল, কী বিপদ ঘনাচ্ছে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
নাম ল্যাপটপ হলেও, তা কোলে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেই বিপদ। মুঠোফোন মুঠোয় রাখাই ভাল, তা পকেটে গিয়ে সেঁধিয়ে গেলে তাতে ক্ষতির পাল্লাই ভারী হবে। ল্যাপটপের চাপে ও তাপে এবং মোবাইলের বিকিরণে শুক্রাশয়ের হাল রীতিমতো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাতে শুক্রাণুর সংখ্যা কমছে, বাড়ছে পুরুষ বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট অফ রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের গবেষণায় তেমনটাই দাবি করা হয়েছে।
টেস্টিস বা শুক্রাশয়ের উপরে বর্ধিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী চাপ যে স্পার্ম বা শুক্রাণু সংখ্যা ও গুণমান কমায়, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকেন কিংবা সারা ক্ষণ কোলের উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করেন, তাঁদের উপর করা পরীক্ষায় এই ব্যাপারে জোরালো সমর্থন পাওয়া গিয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স রিসার্চ ইউনিটের গবেষকেরা ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সি প্রায় ১২০০ পুরুষের শুক্রাণুর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, যাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি কোলে ল্যাপটপ রাখেন বা প্যান্টের পকেটে মোবাইল রেখে দেন, তাঁদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান, দুই-ই কম। ওই ১২০০ জনের মধ্যে অন্তত ৭০৮ জন অ্যাজ়োস্পার্মিয়ার শিকার, অর্থাৎ, যেখানে শুক্রাণুর উৎপাদন প্রায় বন্ধই হয়ে যায়।
ল্যাপটপ-মোবাইল কী ভাবে প্রভাব ফেলে বন্ধ্যত্বে?
শুক্রাশয়ের ব্যাপারটা বরাবরই অন্য রকম। এই অঙ্গ শরীরের বাইরে থাকে বিশেষ কারণে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে ২-৪ ডিগ্রি কম থাকে। এবং সেটা থাকাই বাঞ্ছনীয়। তা হলেই শুক্রাণুর উৎপাদন স্বাভাবিক ভাবে হবে। সে কারণেই শুক্রাশয় শরীরের ভিতরে থাকে না। চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা যদি বৃদ্ধি পায়, তা হলে শুক্রাণুর উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। কোলে ল্যাপটপ নিয়ে বসলে ক্ষতি হবে তিন ভাবে—
১) ল্যাপটপের চাপে শুক্রাশয়ের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে শুক্রাণুর গুণমান কমবে।
২) ল্যাপটপ থেকে নির্গত তাপ শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বাড়িয়ে দেবে। ফলে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হবে।
৩) ল্যাপটপ থেকে যে তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত হয়, তা যদি দিনের পর দিন সরাসরি ধাক্কা দেয়, তা হলে শুক্রাশয়ের দফারফা হতে বাধ্য।
সে কারণেই গরমের সময়ে বেশি আঁটসাঁট জিন্স, অতিরিক্ত চাপা অন্তর্বাস পরতে বারণ করা হয়। বিশেষ করে বন্ধ্যত্বের সমস্যা থাকলে এই পরামর্শই দেন চিকিৎসকেরা। একই ভাবে ক্ষতি করে মোবাইলও। চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, মোবাইলে কম শক্তির তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ তৈরি হয়। তবে তা শরীরের ক্ষতি করে। পকেটে যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেউ মোবাইল রেখে দেন, তা হলে সেই তরঙ্গ শুক্রাশয়ে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়াকে নষ্ট করতে থাকবে। শুক্রাণুর গতিশীলতা ধীরে ধীরে কমবে।
প্রতি দিনই প্রায় ১২ কোটির বেশি শুক্রাণু তৈরি হয় শুক্রাশয়ে। শুক্রাণুর কোষের ভিতর থাকে মাইটোকনড্রিয়া, যা তার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস। আর এর লেজ শুক্রাণুকে সাঁতার কেটে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। ল্যাপটপ ও মোবাইলের তাপমাত্রা এবং বিকিরণ শুক্রাণুর এই সহজাত ক্ষমতাকে নষ্ট করতে থাকে। ল্যাপটপ ও মোবাইলের বিকিরণে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন-এর সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে আরও একটি বিষয় জেনে রাখা জরুরি। শুধু ল্যাপটপ বা মোবাইলকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাও এর জন্য দায়ী। মদ্যপান, ধূমপান কিংবা মাদক সেবন শুক্রাণুর উৎপাদন প্রক্রিয়া বা স্পার্মাটোজেনেসিসের ক্ষতি করে। তাই বন্ধ্যত্বের সমস্যার সমাধানে চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রার ধারা বদলানোও জরুরি।