প্রথমে আমরা জানব অনুভূতি বা ইনটিউসান জিনিসটা কী? প্রথমেই বলে নেওয়া যাক, অনুভূতি জিনিসটা বুদ্ধিগত ব্যাপার নয়। সাধারণত বুদ্ধি হচ্ছে যুক্তির অন্তর্গত। কোনও জিনিস বা কোনও ঘটনা অনুভূতির সাহায্যে আমরা সহজে বা সরাসরি বুঝতে পেরে যাই। আর বুদ্ধির ক্ষেত্রে সেই ঘটনা প্রথমে যুক্তি তারপর সিদ্ধান্তে আসতে হয়। ফলে সেখানে সময় লাগে এবং ভুল হওয়ার সম্ভৈবনা থেকেই যায়। অনুভূতি ই,এস, পি(এক্সট্রা সেন্সরি পারচেপশন) এর অন্তর্গত। সাধারণত অনুভূতি জিনিসটা যার থাকে, তার সেটা জন্ম থেকেই থাকে। অনেকের আবার একটু বেশী বয়সে এই শক্তির আবির্ভাব হয়।
একটা ঘটনা দিয়ে উপরের ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করা যাক। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ওল্ড সোল। ইউরোপ বা আমেরিকায় নেটের মাধ্যমে পৃথিবীতে যেখানে যেখানে যত ওল্ড সোল আছে তাদের সঙ্ঘবদ্ধ করে ওল্ড সোলস ক্লাবও গড়ে উঠেছে। এখানে কে ওল্ড সোল আর কে ওল্ড সোল নয়, সেটা সাইকিকরা তাঁদের অলোকদৃষ্টি বা ক্লেয়্যারভায়ন্সের সাহায্যে সরাসরি বলে দিতে পারছেন। দেখা যাচ্ছে, কেউ বলছেন ওল্ড সোলের ১০টা ক্যারেক্টার বা শর্ত আছে, আবার কেউ বলছেন ৬টা ক্যারেক্টার আছে। মানে এই এই গুণগুলি থাকলে তিনি ওল্ড সোল আর এই এই গুণগুলি না থাকলে তিনি ওল্ড সোল নন। ফলে বুদ্ধি দিয়ে বলার জন্য নানা মতভেদ এসে যাচ্ছে।
এ বার আমরা জানব, হাতের কোন কোন রেখার সাহায্যে কার মধ্যে অনুভূতি আছে বা কার মধ্যে অনুভূতি নেই। প্রথমেই আমরা জানব একজন ব্যক্তি জন্ম থেকেই অনুভূতির রেখাগুলি কী রকম কম্বিনেশন নিয়ে জন্মায়। আর তার প্রকাশ কখন হয়। বলাই বাহুল্য, এটা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক প্রভাবের উপর। যে রেখাগুলি অনুভূতি সৃষ্টিতে সাহায্য করে তার নাম—
(১) অনুভুতি রেখা: এই রেখাটি করতলের ডান হাতের বামদিকে থাকে। এর অনেক নাম। কেউ বলে মার্কারি লাইন বা বুধ রেখা বা স্বাস্থ্য রেখা বা ব্যবসা রেখা, লিভার লাইন, কমার্স লাইন বা বাহ্য শক্তি রেখা। নাম অনেক কিন্তু মূল কাজ সেই একই।
অনুভূতি রেখার বৈশিষ্ট হচ্ছে, এটা কিছুটা ধনুকের মতো চন্দের ক্ষেত্র থেকে বুধের ক্ষেত্র অবধি প্রসারিত থাকে, আবার কখনও থাকে না। কিন্তু মার্কারি লাইন প্রায় শুক্রের ক্ষেত্র থেকে উঠে সোজা বুধের ক্ষেত্র পর্যন্ত যায়। অনুভূতি রেখা অনেক ক্ষেত্রে শিরোরেখাকে এবং হৃদয় রেখাকে মোটেই স্পর্শ করে না। এই রেখা আবার ভগ্ন হয়, কাটা কাটা হয়, ঢেউখেলানো হয়।
(২) মিস্টিক ডেল্টা বা ব-দ্বীপ: এই ব-দ্বীপ গড়ে ওঠে শিরোরেখা, বুধরেখা ও ভাগ্য রেখা মিলে। অনুভূতি রেখা না থাকলেও এই ব-দ্বীপ বা ডেল্টার সাহায্যে অকাল্ট বা গুহ্যজ্ঞান বা গুহ্যবিদ্যার প্রতি আকর্ষণ জন্ম থেকেই বহন করে। কারও কারও ভর হয়, সমাধি হয়। কেউ কেউ বলে, যার হাতে এই ব-দ্বীপ থাকে তার ভাত-কাপড়ের অভাব হয় না।
(৩) শিরো রেখা: কারও একের অধিক শিরোরেখা থাকে। যেমন, কিরোর ডবল শিরোরেখা ছিল। একের বেশি শিরোরেখা প্রতিভা সম্পন্ন ব্যাক্তির হয়।
আর শিরোরেখার দৈর্ঘ্য, বিশেষ করে লম্বা শিরোরেখা চন্দ্রের ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রসারিত হলে, কল্পনা, ভিশন খুব ভাল ভাবে আসে। লম্বা শিরোরেখা বুদ্ধি ছাড়িয়ে বোধিতে পৌঁছতে সাহায্য করে।
(৪) মিস্টিক ক্রশ: বিশেষ করে হৃদয় রেখা আর শিরো রেখার মাঝখানে ভাগ্য রেখাকে ধরে যে মিস্টিক ক্রশ গড়ে উঠে তার গুরত্ব অনেক। এরা আজন্ম আধ্যাত্মিক প্রবণতা নিয়ে জন্মায়। অনেকের অল্প বয়সেই দীক্ষা হতে দেখা যায়।
(৫) অনুভূতি রেখার উপর বড় বা মাঝারি আকারের যবচিহ্ন থাকলে এরা ভাল রকমের ভিশনিস্ট হতে পারে। এরা সহজেই স্পিরিট ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখতে পারে।
চন্দ্র, মঙ্গল ও বুধের ক্ষেত্র নিয়ে ডান করতলে বাঁদিকে যে ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে, এটা যার হাতে যত প্রসারিত হবে সে বুঝতে পারে তার নিজের চেষ্টা ছাড়া আর একটা শক্তি তার মধ্যে কাজ করে চলেছে। সেটা সে ভাল রকম ভাবে পারে।
এর উপর অনুভূতি রেখা বা বুধ রেখা থাকলে একজন ব্যাবসাদার বুঝতে পারে কখন কোন জিনিসটা কিনলে আর কখন বিক্রি করলে এবং কোন খদ্দেরের কাছে বিক্রি করলে তার লাভ হবে বা লোকসান হবে।
নাট্যকারের হাতে থাকলে সে জানে কী ভাবে অভিনয় করলে দর্শক তাকে গ্রহণ করবে।
একজন ডাক্তার সহজেই বুঝে যায় রোগীকে কী ভাবে চিকিৎসা করলে সে সহজেই সুস্থ হয়ে উঠবে।
যারা জ্যোতিষ বা যোগ বা সাইকিক কালচার করেন, বিশেষ করে তাদের হাতে এই অনুভূতির চিহ্নগুলি থাকলে তাদের ভবিষ্যদ্বণী করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা হবে।
যোগ পথে যাঁরা নিত্য ধ্যানে উপনিবেশ করেন, তাঁদের প্রগতির পথে যে মিস্টিক অনুভূতিগুলি তাঁরা লাভ করেন, তার সাহায্যে তিনি নিজে লাভবান হন, অনেক ক্ষেত্রে তাঁর কাছের মানুষ কখনও কখনও তাঁর দ্বারা উপকৃত হয়ে থাকেন।
কবি, সুরকার, কাব্য বা ছন্দ বা সুর উপরের জগত থেকে মান কল্যাণে নীচে নামিয়ে আনেন।
একজন গোয়েন্দা সহজেই কোনও খুনের ক্ষেত্রে “মোডাস-ওপারেন্ডি” –এই রেখা থাকার জন্য সহজেই ধরতে পারে।