দশমহাবিদ্যার দশ রূপ ও তার ব্যাখ্যা (প্রথম পর্ব)

কবি হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় রচিত বাংলা কাব্যে ও কালিকা পুরাণ, দেবী পুরাণ, মৎস্য পূরাণ-সহ বিভিন্ন পূরাণে বর্ণিত আছে, সতীর দেহত্যাগে মহাদেব বিলাপ করতে করতে অচেতন হয়ে পড়েন। তখন নারদ এসে বীণা বাজালে শিবের জ্ঞান ফেরে। শিব বলেন যে, তিনি অচেতন অবস্থায় এত ক্ষণ সতীকে দর্শন করছিলেন।

Advertisement

পার্থপ্রতিম আচার্য

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৬
Share:

ব্রহ্মা দক্ষ প্রজাপতিকে বিভিন্ন প্রজাতির অধিপতি করে দিলেন। এতে গর্বিত হয়ে দক্ষ প্রজাপতি বৃহষ্পতি নামে মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। সেই যজ্ঞে ত্রিলোকের সকলকে নিমন্ত্রণ করেন। কেবল মহাদেব এবং কনিষ্ঠা কন্যা সতীকে নিমন্ত্রণ করেননি। শিব ছিলেন দক্ষের জামাতা। সতী এই মহাযজ্ঞের অনুষ্ঠানের খবর জানতে পেরে বিনা নিমন্ত্রণে সেখানে যাওয়ার জন্য স্বামীর অনুমতি চান। কিন্তু অনুমতি না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি তাঁর ক্ষমতা দেখানোর জন্য স্বমূর্তি ত্যাগ করে শিবের ভয় উৎপাদন করার জন্য দেবী ভগবতী দশদিকে দশমূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে মহাদেবের পথ অবরুদ্ধ করেন। এই দশ মূর্তিকে দশমহাবিদ্যা বলা হয়।

Advertisement

কবি হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় রচিত বাংলা কাব্যে ও কালিকা পুরাণ, দেবী পুরাণ, মৎস্য পূরাণ-সহ বিভিন্ন পূরাণে বর্ণিত আছে, সতীর দেহত্যাগে মহাদেব বিলাপ করতে করতে অচেতন হয়ে পড়েন। তখন নারদ এসে বীণা বাজালে শিবের জ্ঞান ফেরে। শিব বলেন যে, তিনি অচেতন অবস্থায় এত ক্ষণ সতীকে দর্শন করছিলেন। সতী কোথায়, নারদ জানতে চাইলে মহাদেব মহাকালের মধ্যে সিংহ,কন্যা, তুলা প্রভৃতি দশটি রাশির দশটি মহাপুরিতে দশ মহাবিদ্যার অবস্থান দেখিয়ে দেন এবং মহাবিদ্যার তত্ত্ব কথার রসহস্য বুঝিয়ে দেন।

আসুন জেনে নেওয়া যাক দশমহাবিদ্যার দশটি রূপ:

Advertisement

১। কালী:

দশমহাবিদ্যার প্রথম রূপ হল কালী। শুম্ভ ও নিশুম্ভ বরে অজেয় হওয়ায় তাদের অত্যাচারে দেবগণের প্রার্থনায় দেবী দুর্গার ভ্রকুটি থেকে বেরিয়ে এলেন কালী। যার চার হাতের ডান দিকে হাতে খঙ্গ ও চন্দ্রহাস। বাম দিকের হাতে চর্ম ও পাশ। গলায় নরমুণ্ড, দেহ পশু চর্ম আবৃত। বড় বড় দাঁত,রক্ত চক্ষু ও বিস্তৃত মুখ, স্থুল কর্ণ। দেবীর বাহন কবন্ধ (মস্তক বিহিন দেহ)। তন্ত্রে বাহন মহাকাল এবং দেবীকে শান্ত ও উগ্র দুই রূপেই বর্ণনা করা আছে।

২। তারা:

দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় রূপ হল তারা। ভীষণ দর্শনা কালীর ভয়ে মহাদেব ভীত হলে সতী দ্বিতীয় বার আবির্ভূত হন তারা রূপে। তাঁর গায়ের রং নীল, নব যৌবনা, পরিধানে ব্যাঘ্র চর্ম। দেবীর চারটি হাত। দেবীর অবস্থান প্রজ্জলিত চিতার মধ্যে। তাঁর বাম পা শিবের বুকে অবস্থিত। তন্ত্রশাস্ত্রে ইনি মহানীল সরস্বতী।

আরও পড়ুন: প্রতি দিন এই দেবতাদের সামনে প্রদীপ জ্বালান, জীবনে এমন কিছু হবে যা চমকে দেবে

৩। ছিন্নমস্তা:

দশমহাবিদ্যার তৃতীয় রূপ হল ছিন্নমস্তা। দেবীর এই তৃতীয় রূপই সব থেকে ভয়ঙ্কর। বাম হাতে ধরে আছেন নিজের মাথা এবং গলা থেকে নির্গত রক্তের স্রোত তিন ধারার মধ্য মাঝের ধারা সেই ছিন্ন মস্তকে পান করছেন। বামে মহচরী ডাকিনী ও ডানে সহচরী বর্ণিনী বাকি সেই দুই রক্তধারা পান করছেন। সবাই দিগম্বরী, মুণ্ডমালিনী ও মুক্তকেশী। ছিন্নমস্তা দেবী নানা ফুলে শোভিত। গলায় মুণ্ডমালা এবং নাগ উপবীত। রতি ও কামদেবের উপর ইনি দণ্ডায়মান।

একদিন পার্বতী ডাকিনী ও বর্ণিনীকে নিয়ে মন্দাকিনী নদীতে স্নান করতে যান। মন্দাকিনীতে জলকেলী করে উঠে দুই সহচরী আর্তনাদ করে ওঠেন, ‘আমি ক্ষুধার্ত, আমাদের খাদ্য দাও’। কিন্তু ডাকিনী ও বর্ণিনী রক্ত ও মাংস ছাড়া অন্য খাদ্য খায় না। তখন দেবী অট্টহাস্য করে নিজের নখাগ্র দিয়ে নিজের কণ্ঠচ্ছেদ করলেন। ছিন্নমস্তকটি তখন তাঁর বাম হাতে এসে পড়লো। মুক্তকণ্ঠ থেকে তিনটি ধারায় ফিনকী দিয়ে রক্তস্রোত বের হতে লাগল। দেবীর দুই পাশে দাঁড়িয়ে দুই সহচারী সেই দুই রক্তধারা পান করতে লাগল। মধ্য ধারা দেবী সেই ছিন্ন মস্তক দ্বারা পান করতে লাগলেন। এই রূপ তিনি স্বামীকে ভয় দেখানোর জন্য এই বিভূতি দেখান।

৪। ষোড়শী:

দশমহাবিদ্যার চতুর্থ রূপ হলো ষোড়শী। তারা রূপ ত্যাগ করে মহাদেবের সামনে আবির্ভূত হলেন ষোড়শী রূপে। দুর্গার অন্য রূপ শতাক্ষীর দেহ হতে আবির্ভূত হন ষোড়শী রূপে। ষোড়শীর অপর নাম স্ত্রী বিদ্যা। ত্রিপুরা সুন্দরী, রাজ রাজেশ্বরী। ত্রিপুর শব্দের অর্থ বলা হয়েছে যিনি ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষম্নাতে অথবা মন, চিত্ত ও বুদ্ধিতে অবস্থিত। দেবীর চার হাত, গায়ের রং জবাকুসুমের মতো (ভোরের সূর্যের মতো) হাতে নানাবিধ অস্ত্র। মহাদেবের নাভি পদ্মের উপর দেবী আসীন। নীচে দেবগণ স্তব করছেন। শঙ্করাচার্য ও অভিনব গুপ্ত কর্তৃক এই দেবী পূজিতা হয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন