আছি: হাজিরাপত্রে টিপ ছাপ দিলেন বৃদ্ধ চন্দ্রধর। সম্প্রতি শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইবুনালের বারান্দায়। —নিজস্ব চিত্র।
ফরেনার্স ট্রাইবুনালে সরকারি আইনজীবী নেই। সুতরাং তিন ঘণ্টা আদালতের বারান্দায় শুয়ে থেকেও নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ সে দিন পেলেন না প্রায় অথর্ব ‘১০২ নট আউট’ চন্দ্রধর দাস। ফের তাঁকে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে নোটিস পাননি বলে গরহাজির ছিলেন চন্দ্রধরবাবু। সে দিন একতরফাই তাঁকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ বিছানা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এই শতায়ু বৃদ্ধকে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দেয়। সেখানে শয্যাশায়ী মানুষটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। আপিল মামলা করে চন্দ্রধরবাবুর পরিবার। তিন মাস পর বয়সের কথা বিবেচনা করে আদালত তাঁকে জামিনে মুক্তি দেয়। গত সোমবারই ছিল আপিলের প্রথম শুনানির দিন। মেয়ে নিয়তি রায় বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আমড়াঘাট থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে, শিলচরে আসেন। সকাল ন’টা থেকে ট্রাইবুনালের বারান্দায় শুয়ে থাকেন বৃদ্ধ। বেলা ১২টায় জানতে পারেন, সরকারি আইনজীবী না থাকায় তাঁর মামলার শুনানি হবে না।
কাছাড় জেলার ছ’টি ফরেনার্স ট্রাইবুনালের মধ্যে এই ৬ নং ট্রাইবুনালে তিন মাস ধরে কোনও সরকারি আইনজীবী নেই। সদস্য-বিচারক সুনীল কর্মকার নিজে কিছু কিছু মামলা এগিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে ফিরে আসতে হয়। ফিরতে হল চন্দ্রধরবাবুকেও। নিয়তিদেবীর কথায়, ‘‘এই অসুস্থ বুড়ো মানুষটাকে ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে নিয়ে আসা যে কী কষ্টকর! এতটা সময় গাড়িতে বসে থাকা ওঁর পক্ষে খুবই যন্ত্রণাদায়ক।’’ গরিব পরিবারটির পক্ষে বারবার গাড়ি ভাড়া জোগাড় করাটাও বেশ কষ্টকর।
নিয়তিদেবীর প্রশ্ন, ‘‘কী দোষ বাবার? ১৯৫০-৫১ সালে ভারতে আসেন। ত্রিপুরায় কিছুদিন কাটিয়ে আসেন কাছাড়ে। ১৯৬৬ সালে এখানে ভোটও দিয়েছেন। সেই নথি নিয়ে ঘুরছেন। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই।’’ অভিযুক্ত না এলে যদি বিদেশি বলে একতরফা রায় হয়, তবে সরকারি উকিল না থাকলে নথিপত্র দেখে কেন ভারতীয় বলে রায় হবে না, জানতে চান নিয়তিদেবী।
জেলাশাসক এস লক্ষ্মণন আশ্বাস দিয়েছেন, ১৪ সেপ্টেম্বর অন্তত এই মামলার জন্য সরকারি আইনজীবীর ব্যবস্থা করা হবেই। আইন মেনে কী ভাবে তাঁকে সাহায্য করা যায়, তা তিনি দেখবেন।