গ্রামে যৌথ বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ। শনিবার। ছবি: সৈকত চট্টোপাধ্যায়
দলছুট জঙ্গিদের ১৬ জনকে হত্যা করল মাওবাদীরা। গত কাল গভীর রাতে ঝাড়খণ্ডের পলামু জেলার ছোটকি কোরিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
আজ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের দফতরে টেলিফোন করে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে মাওবাদীরা। তাদের বক্তব্য, তৃতীয় প্রস্তুতি কমিটির (টিপিসি) ওই ১৬ জনকে হত্যা করে তারা ১৭ মাস আগের হামলার প্রতিশোধ নিল। উল্লেখ্য, সেই ঘটনায় টিপিসি ১০ জন মাওবাদী জঙ্গিকে হত্যা করেছিল। সকালে খবর পেয়ে চিত্র সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে মৃত জঙ্গিদের ছবি তুলতে গেলে টিপিসির অন্য একটি দল বন্দুক দেখিয়ে তাঁদের ভয় দেখায়। এরপর দলীয় সদস্যদের মৃতদেহ টিপিসির তরফ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরেই ঘটনাস্থলে ঢুকতে পারে পুলিশ। ঘটনার পরে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র অনুরাগ গুপ্ত শুধু বলেন, “আমাদের কাছে ১৪ জনের মারা যাওয়ার খবর রয়েছে। তবে কোনও মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।”
পলামুয়ে বরাবরই মাওবাদীদের আধিপত্য। গত কাল রাতে সেখানকার ছোটকি কোরিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে জড়ো হয়েছিল টিপিসি জঙ্গিরা। জঙ্গল সংলগ্ন ওই গ্রামে মাত্র পঞ্চাশটি পরিবারের বসবাস। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই বাড়িটির ভিতরে টিপিসি জঙ্গিদের বৈঠক চলছিল। কয়েকজন বাড়ির বাইরে পাহারায় ছিল। রাত আড়াইটে নাগাদ বাড়িটি সশস্ত্র মাওবাদী জঙ্গিরা ঘিরে ফেলছে দেখে বাইরে থাকা টিপিসি জঙ্গিরা গুলি চালায়। শুরু হয় গুলির লড়াই। আতঙ্কে ঘুম থেকে জেগে ওঠে পুরো গ্রাম। মাওবাদীদের বিশাল বাহিনীর সামনে গুলির লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয় টিপিসি জঙ্গিরা। এক সময় তাদের গুলিও ফুরিয়ে যায়। এরপরে মাওবাদীরা ওই বাড়িটির ভিতরে ঢুকে ষোলো জন টিপিসি জঙ্গিকে একের পর এক গুলি করে হত্যা করে। আজ সকালে টিপিসির অন্য একটি দল এসে মৃতদেহগুলি নিয়ে চলে যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের হোলির দিন চাতরাতে মাওবাদীদের দশ জনকে গুলি করে মেরেছিল টিপিসির জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় লালেশ যাদব, ধর্মেন যাদব, প্রফুল্ল যাদব-সহ ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ছত্তীসগঢ়ের কয়েক জন বড় মাপের মাওবাদী নেতা নিহত হন। তার প্রতিবাদে গত বছর এ রাজ্যে একাধিক নাশকতার ঘটনা ঘটায় মাওবাদীরা। পলামুয়ে থানায় হামলা চালানো হয়। সে সময় মাওবাদীরা অভিযোগ করে, পুলিশের মদতেই ওই ঘটনা। এর বদলা নেওয়া হবে বলে তখনই ঘোষণা করে মাওবাদীরা। সেই বদলা নিয়ে তারা রাজ্য পুলিশকেও বার্তা দিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।