হুদহুদের জের, উত্তরপ্রদেশে মৃত ১৮

হুদহুদের থাবা এ বার উত্তরপ্রদেশে। মধ্যপ্রদেশে বাড়ি ভেঙে ৩ জনের মৃত্যুর পরে এ বার উত্তরপ্রদেশে মৃত ১৮ জন। অন্ধ্র ও ওড়িশাকে পিছনে ফেলে হুদহুদের অভিমুখ যে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের পরে উত্তরপ্রদেশের দিকে, তার পূর্বাভাস কালই মিলেছিল। প্রবল ঝড় এবং ভারী বৃষ্টিপাত থেকে আজ কিছুটা রেহাই মিললেও গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় রাজ্যে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে প্রশাসন সূত্রে খবর। বেশি ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের পূর্ব অংশে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা • লখনউ ও বিশাখাপত্তনম

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

হুদহুদের থাবা এ বার উত্তরপ্রদেশে। মধ্যপ্রদেশে বাড়ি ভেঙে ৩ জনের মৃত্যুর পরে এ বার উত্তরপ্রদেশে মৃত ১৮ জন।

Advertisement

অন্ধ্র ও ওড়িশাকে পিছনে ফেলে হুদহুদের অভিমুখ যে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের পরে উত্তরপ্রদেশের দিকে, তার পূর্বাভাস কালই মিলেছিল। প্রবল ঝড় এবং ভারী বৃষ্টিপাত থেকে আজ কিছুটা রেহাই মিললেও গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় রাজ্যে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে প্রশাসন সূত্রে খবর। বেশি ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের পূর্ব অংশে।

মঙ্গলবার দিনভর বৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে। সঙ্গে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া। প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘরছাড়া হয়েছেন বহু মানুষ। গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি ইত্যাদি রাস্তার উপর উপড়ে পড়ায় বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জনজীবন। রাজ্য আবহাওয়া দফতরের দাবি, মঙ্গলবারের বৃষ্টি সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। আজও জলমগ্ন থাকতে দেখা গিয়েছে চারবাগ রেল স্টেশন, ঠাকুরগঞ্জ, ইন্দিরানগর, গোমতিনগর, সীতাপুর রোড, আলিগঞ্জ-সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সব চেয়ে বেশি ছিল গোরক্ষপুরে। মঙ্গলবার এখানে ১৪২.১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে খবর। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৩ কিলোমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টাতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে রাজ্যে।

Advertisement

মৌসম ভবন সূত্রে খবর, বড় জোর আর দু’দিন। তার পরেই পাততাড়ি গোটাবে হুদহুদ। রবিবার একই সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল হুদহুদ। তাণ্ডব সেরে বেরিয়ে যাওয়ার তিন দিন পরেও বেসামাল অন্ধ্রপ্রদেশ। আজ ফের ৯ জনের মত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ। সব মিলিয়ে শুধু অন্ধ্রেই মৃতের সংখ্যা ৩৫ ছাড়িয়েছে বলে দাবি তাদের।

হুদহুদের প্রাথমিক ধাক্কা সামলেই অন্তর্বর্তী সাহায্য হিসেবে কেন্দ্রের থেকে ২ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। বিপর্যস্ত রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা সরেজমিনে দেখে মঙ্গলবার প্রাথমিক পর্বে ১০০০ কোটি টাকার ত্রাণ ঘোষণাও করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর আজ চন্দ্রবাবু দাবি করেন, রাজ্যে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকার।

বিশাখাপত্তনমকে ‘স্মার্ট সিটি’ বানাতে চেয়েছিলেন মোদী। মনে করা হচ্ছে, কুড়ি লাখের শহর এই বিশাখাপত্তনমই এ দফায় এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও বহু অংশে অকেজো ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা। রাজ্যের একটা বড় অংশ আজও বিদ্যুৎহীন। এ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কালই কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ বলেন, আগামিকালের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

পেট্রোল তো বটেই পানীয় জল, দুধ-ও অপর্যাপ্ত বলে অভিযোগ করেন বিশাখাপত্তনমের স্থানীয়রা। অভিযোগ, ২০ টাকার দুধ ৫০ টাকায় বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

তবু প্রাণপণ ছন্দে ফিরতে চাইছে অন্ধ্র। বিশাখাপত্তনম ও ভুবনেশ্বর-সহ পূর্ব ভারতমুখী প্রায় সমস্ত রুটেই আজ থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের দক্ষিণ-মধ্য রেলওয়ে বিভাগের কর্তারা।

ঢেলে সাজছে বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরও। ঝড়ের দাপটে শুধু এখানেই ৭৫ থেকে ৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। চন্দ্রবাবু অবশ্য বলছেন ৫০০ কোটি। সরকারি বিমান চলাচল তো বটেই, বেসরকারি বিমান চলাচলও বন্ধ এই বন্দর থেকে। ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। তাই জোরকদমে চলছে পুনর্নিমাণের কাজ। কর্তৃপক্ষের দাবি, ১৮ তারিখ থেকেই আংশিক ভাবে হলেও ছন্দে ফিরবে বিমানবন্দর।

ঝড়ে বিপর্যস্ত অন্ধ্রে পাঠানো হচ্ছে আলু

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

ঘূর্ণিঝড় হুদহুদে ক্ষতিগ্রস্ত অন্ধ্রপ্রদেশে আলু পাঠাচ্ছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, ২৪০০ টন আলু অন্ধ্রপ্রদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিনামূল্যে নয়। ২০ টাকা কিলো দরে অন্ধ্রপ্রদেশকে আলু বিক্রি করা হবে বলে কৃষি দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন। সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার রাজ্যের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার আলু পাঠাচ্ছে। গত বছর ওড়িশায় ঘূর্ণিঝড়ের পরেও এ রাজ্য থেকে আলু পাঠানো হয়েছিল। এমনিতেই সারা রাজ্যে এখনও আলুর দাম বেশ চড়া। জ্যোতি আলু ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চন্দ্রমুখী বিকোচ্ছে ২৫-২৭ টাকা দরে। এই অবস্থায় অন্ধ্রে আলু গেলে রাজ্যের বাজারে তার কোনও প্রভাব পড়বে না তো? সেই প্রশ্ন অবশ্য উঠছে। তবে কৃষি দফতরের ওই কর্তা জানাচ্ছেন, বাইরে আলু গেলেও রাজ্যের চাহিদা মেটাতে কোনও সমস্যা হবে না। নবান্ন সূত্রে খবর, অন্ধ্রপ্রদেশে আলু পাঠানোর জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আলু ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা জানাচ্ছেন, মেদিনীপুর থেকে প্রতিদিন ৩২ হাজার টন আলু ওড়িশায় যাচ্ছে। হুগলি থেকে অন্ধ্রপ্রদেশেও প্রতিদিন ১৬ হাজার টন আলু যায়। রাজ্য সরকার যে অন্ধ্রপ্রদেশে আলু পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা হয়নি বলেই ওই নেতার দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন