এক দেশ-এক ভোট নিয়ে কমিটি, গেলেন না অর্ধেকই, মোদী অটল

অনেক দিন ধরেই লোকসভা ও সব বিধানসভার ভোট একসঙ্গে করানোর পক্ষে সওয়াল করে আসছেন মোদী। আজ বুঝিয়ে দিলেন, দ্বিতীয় বার গদিতে বসে ওই পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে তিনি বদ্ধপরিকর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০৩:৪৬
Share:

সর্বদল বৈঠক সেরে বেরোচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

লোকসভা ভোটের সঙ্গে সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট সেরে ফেলার বিষয়ে আলোচনা করতেসব দলকে বৈঠকে ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে কংগ্রেস-সহ ১৯টি রাজনৈতিক দলই তাতে যোগ দিল না। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত ২১টি দলের অধিকাংশই ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর প্রস্তাবকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে বলে দাবি করল মোদী সরকার।

Advertisement

অনেক দিন ধরেই লোকসভা ও সব বিধানসভার ভোট একসঙ্গে করানোর পক্ষে সওয়াল করে আসছেন মোদী। আজ বুঝিয়ে দিলেন, দ্বিতীয় বার গদিতে বসে ওই পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে তিনি বদ্ধপরিকর। আজ সর্বদলীয় বৈঠকে মোদী জানিয়েছেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে পরামর্শ দিতে একটি কমিটি তৈরি হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মতামত জানাতে বলা হবে কমিটিকে। তৃণমূল-সহ অনেক রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে সবিস্তার আলোচনার দাবি তুলেছে।

লোকসভার সঙ্গেই বিধানসভা ভোট হলে আঞ্চলিক দলগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে বলে তৃণমূলের মতো নানা আঞ্চলিক দলের আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কোনও রাজ্যের মানুষ লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে বিজেপি বা কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলকে ভোট দিলেও, পরে রাজ্যের বিধানসভায় আঞ্চলিক দলকে ভোট দেয়। একই সঙ্গে দুই ভোট হলে জাতীয় দলগুলিই প্রাধান্য পাবে। কারণ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কোনও রাজ্যে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হলে ৭৭ শতাংশ ভোটার একই দলকে ভোট দেন। বিরোধীদের আশঙ্কা, ক্ষমতায় বহু দিন টিকে থাকতেই মোদী ‘এক দেশ, এক ভোট’ চাইছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নীতি রূপায়ণে কী কী হতে পারে

এক দেশ, এক ভোট কী

লোকসভার সঙ্গেই সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট
তাতে লাভ কী
• খরচ কম হবে, ভোটের জন্য উন্নয়নের কাজ থমকে থাকবে না। ১৯৫১ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত এ ভাবেই ভোট হয়েছে
সমস্যা কোথায়
• আঞ্চলিক দলগুলির অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে, জাতীয় দল প্রাধান্য পাবে
• কেন্দ্রে বা রাজ্যে পাঁচ বছরের আগে সরকার পড়ে গেলে কী হবে

আজকের বৈঠকে আঞ্চলিক দল বিজেডির নবীন পট্টনায়ক, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের জগন্মোহন রেড্ডি সমর্থন জানিয়েছেন মোদীর প্রস্তাবে। কিন্তু সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি অভিযোগ তুলেছেন, এ হল ঘুরপথে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ভোট চালু করা। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও গণতন্ত্রের বিরোধী।

সব চেয়ে বড় বিরোধী দল কংগ্রেস। তার সভাপতি রাহুল গাঁধীই আজকের বৈঠকে যোগ দেননি। গরহাজির ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, বিএসপি নেত্রী মায়াবতী, তেলুগু দেশমের চন্দ্রবাবু নায়ডু, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরীবাল, ডিএমকে-র এম কে স্ট্যালিন। এনডিএ-র শরিকদের মধ্যে শিবসেনা দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের জন্য বৈঠকে যোগ দেয়নি। আরজেডি, জেডি(এস)-ও বৈঠকে যায়নি। আবার ইউপিএ-শরিকদের মধ্যে এনসিপি-র শরদ পওয়ার বৈঠকে যোগ দেন। এডিএমকে, তেলুগু দেশম, আপ অবশ্য নিজের প্রতিনিধিদের পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু শুধু দলের শীর্ষ নেতাদেরই আমন্ত্রণ ছিল বলে তাঁরা বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। জম্মু-কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুখ আবদুল্লা, পিডিপি-র মেহবুবা মুফতি বৈঠকে যোগ দেন।

সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ বদলানোর দরকার হতে পারে

• ৮৩ সংসদের দুই কক্ষের মেয়াদের কথা বলা হয়েছে
• ৮৫ লোকসভা ভেঙে দেওয়ার নিয়ম নথিবদ্ধ রয়েছে
• ১৭২ রাজ্য বিধানসভাগুলির মেয়াদের কথা বলা রয়েছে
• ১৭৪ বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার নিয়ম নথিবদ্ধ রয়েছে
• ৩৫৬ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার বিধি নথিবদ্ধ রয়েছে
• বদলাতে হতে পারে ১৯৫১ সালে তৈরি হওয়া জনপ্রতিনিধিত্ব আইনও

লোকসভা ভোটের সঙ্গেই সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট সেরে ফেলার পিছনে মোদীর যুক্তি হল, এতে নির্বাচনের পিছনে খরচ কমবে। ভোটের আদর্শ আচরণ বিধির জন্য প্রতি বছর সরকার কাজ থমকে থাকবে না। নীতি আয়োগ, আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশনও এই ভাবনাকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রে বা রাজ্যে পাঁচ বছরের মধ্যে সরকার পড়ে গেলে কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

স্পষ্ট অবস্থান না-নিলেও, কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকার নজর ঘোরানোর জন্য এ সব প্রসঙ্গ তুলছে। তিনি যেতে পারছেন না বলে রাহুল সরকারকে জানিয়ে দেওয়ার পরে কংগ্রেসের গৌরব গগৈ বলেন, ‘‘ইভিএম-এর বদলে ব্যালট, টাকা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবহারের মতো সংস্কারের কথা আমরাও বলছি। কিন্তু মোদী সরকার নজর ঘোরানোর জন্য একসঙ্গে ভোটের কথা বলছে। সরকার একইসঙ্গে ভোট করতে চাইলে, হিমাচলপ্রদেশ ও গুজরাত বিধানসভার ভোট আলাদা সময়ে হল কেন? এখন গুজরাতের দু’টি রাজ্যসভার আসনের ভোটই বা আলাদা হচ্ছে কেন?’’ এসপি নেতা অখিলেশ যাদবেরও অভিযোগ, মোদী সরকার আসলে মানুষের সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে। বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর যুক্তি, গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনকে সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত নয়। বাজে খরচের দাঁড়িপাল্লায় ভোটকে মাপা উচিত নয়। তাঁর বক্তব্য, ব্যালট পেপারে ভোট নিয়ে আলোচনা হলে তিনি এই বৈঠকে যোগ দিতেন।

কংগ্রেস এবং ইউপিএর অন্দরে যে এ বিষয়ে মতের ফারাক রয়েছে, তা অবশ্য স্পষ্ট। মুম্বইয়ের কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওরা প্রধানমন্ত্রীর ভাবনাকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছেন। এনসিপি-প্রধান শরদ পওয়ার বৈঠকে নীতিগত সমর্থন জানিয়ে এর জন্য সংবিধানে একগুচ্ছ সংশোধনের দরকার বলে জানিয়েছেন। বৈঠকের পরে রাজনাথ সিংহ দাবি করেন, ‘‘অধিকাংশ দলই এক দেশ, এক নির্বাচনকে সমর্থন জানিয়েছে। সিপিএম, সিপিআই ভিন্ন মত জানালেও, ওঁরা পরিকল্পনার বিরোধিতা করেননি। রূপায়ণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন