বুরহানের মৃত্যুদিনে পাক হানা, নিহত ২

বুরহানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছিল কাশ্মীরে। বুরহানের জন্মস্থান ত্রাল-সহ তিনটি শহরে জারি ছিল কার্ফু। বন্ধ ছিল ইন্টারনেট। অমরনাথ যাত্রাও স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীনগর ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৯
Share:

উঁকি: বাইরে তখন চলছে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ। সেই হিংসার সাক্ষী এই খুদেও। শনিবার শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই।

জঙ্গি কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুবার্ষিকীতে হিংসা থামল না কাশ্মীরে। কাশ্মীরের আগুন উস্কে দিতে বুরহানকে ‘স্মরণ’ করেছেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।

Advertisement

বুরহানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছিল কাশ্মীরে। বুরহানের জন্মস্থান ত্রাল-সহ তিনটি শহরে জারি ছিল কার্ফু। বন্ধ ছিল ইন্টারনেট। অমরনাথ যাত্রাও স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

কিন্তু গত কাল গভীর রাতে বান্দিপোরা জেলায় সেনার একটি টহলদারি দলের উপরে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তাতে ক্যাপ্টেন স্তরের এক অফিসার-সহ তিন সেনা জওয়ান আহত হন। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে বাহিনী।

Advertisement

আরও পড়ুন: জুনেইদকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার

এর পরে আজ ভোর থেকেই পুঞ্চে সংঘর্ষবিরতি ভেঙে হামলা শুরু করে পাক বাহিনী। তাতে টেরিটোরিয়াল আর্মির জওয়ান মহম্মদ শৌকত ও তাঁর স্ত্রী সাফিয়া বি নিহত হন। আহত হয় তাঁদের দুই মেয়ে বছর ছয়েকের জাইদা কৌসর ও বছর বারোর রবিনা কৌসর। শৌকত ছুটিতে নিজের গ্রাম কারমারায় এসেছিলেন। পাক হামলায় ওই গ্রামের বাসিন্দা নাজিয়া বি নামে অন্য একটি শিশুও আহত হয়েছে।

এ দিনই ভারতীয় হামলার ‘প্রতিবাদ’ জানাতে ইসলামাবাদে ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার জে পি সিংহকে ডেকে পাঠায় পাক বিদেশ মন্ত্রক। পাকিস্তানের দাবি, সংঘর্ষবিরতি ভেঙে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে ভারত। চিরিকোট এবং সাতওয়াল সেক্টরে এ দিনই গুলিবর্ষণ করেছে ভারতীয় বাহিনী। ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, পাক অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জে পি সিংহ। উল্টে পুঞ্চে পাক হামলায় ভারতীয় দম্পতির মৃত্যুর কড়া প্রতিবাদ জানান তিনি।

কার্ফু এবং বিধিনিষেধ সত্ত্বেও আজ কাশ্মীরের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় যুবকদের একাংশ। বাহিনী-জনতা সংঘর্ষে ২৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলওয়ামায় ফ্ল্যাগমার্চ করেছে সেনা।

বুরহানের মৃত্যুবার্ষিকীতে কাশ্মীরের আগুন উস্কে দেওয়ার চেষ্টা ছা়ড়েনি পাকিস্তান। আজ পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘‘বুরহানের রক্ত কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন গতি এনেছে। সংগ্রামকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে কাশ্মীরিরা বদ্ধপরিকর।’’ পাক সেনাপ্রধান কমর বাজওয়ার দাবি, ‘‘বুরহান ওয়ানি ও কাশ্মীরের কয়েক প্রজন্মের মানুষের বলিদান ভারতের দমননীতির বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের সংগ্রামের প্রতীক।’’

প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, এ দিন অন্তত উপত্যকা জুড়ে বড় ধরনের জনবিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি। সে ক্ষেত্রে বাহিনী-জনতা সংঘর্ষে বহু মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল। তবে আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। তাঁদের মতে, বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে সামনে রেখে পাকিস্তান যে কাশ্মীরে গোলমালকে আরও বাড়াতে চাইছে তা শরিফ ও বাজওয়ার বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। দক্ষিণ কাশ্মীরের পরিস্থিতি শুধরোনোর এখনও কোনও লক্ষণ নেই। পরিস্থিতি সামলাতে সেনার ‘ক্লিন আপ’ মিশনে আরও গতি আনার কথা ভাবছে কেন্দ্র। তবে তাতে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সন্দিহান কেন্দ্রের অনেক কর্তাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন