রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক যুবক। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। উচ্চ গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে, বাস, ট্যাক্সি, মোটরবাইক। কিন্তু ওই যুবকের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না কেউ। অবশেষে যখন ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল, ততক্ষণে সব শেষ।
পূর্ব দিল্লির বিবেক বিহার এলাকার কস্তুরবা নগর ট্র্যাফিক সিগন্যালে ঘটনাটি সোমবার রাতে ঘটলেও প্রকাশ্যে এসেছে শুক্রবার। বছর কুড়ির বিবিএ পড়ুয়া বিনয় জিন্দলকে কেউ বাঁচাতে না এলেও, মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছে মতো তাঁর দু’টো চোখ হাসপাতালে দান করেছে বিনয়ের পরিবার।
ঘটনাস্থলে থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দুর্ঘটনার গোটা ছবি। প্রায় দশ মিনিটের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। স্থানীয় ঝিলমিল কলোনির বাসিন্দা বিনয় সোমবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিলেন। আচমকাই তাঁর স্কুটিতে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। রাস্তায় ছিটকে পড়ে যান বিনয়। স্কুটিটা গিয়ে আছড়ে পড়ে ট্রাফিক সিগন্যালের পোস্টে। বিনয়ের পর আরও একটি স্কুটিকে ধাক্কা মেরে তীব্র গতিতে উধাও হয়ে যায় গাড়িটি। ঘটনার পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও খোঁজ মেলেনি গাড়িটির বা চালকের।
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা গিয়েছে, বিনয় যখন রাস্তায় পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন, সে সময় প্রচুর গাড়ি, মোটরবাইক তাঁর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কেউ নেমে এসে বিনয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি বা তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেননি। পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, কন্ট্রোল রুমে ফোন যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে আসে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় কুড়ি মিনিট দূরের একটি হাসপাতালে যখন বিনয়কে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আর কিছু করার ছিল না। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু হয়েছে বিনয়ের।
কয়েক মাস আগেই বিনয়ের বাবা মারা গিয়েছেন। মা ও বোনের সঙ্গে থাকতেন বিনয়। এলাকার কিছু বাচ্চাকে পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করছিলেন তিনি। বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল দু’দিন বাদেই। কিন্তু তার আগেই এই দুর্ঘটনা।