স্বস্তিতে বিজেপি

অটল জমানার টুজি তদন্তে তিরস্কৃত সিবিআই

অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় টুজি স্পেকট্রাম বণ্টনে দুর্নীতির মামলা করে আদালতের তোপের মুখে পড়ল সিবিআই। আজ বিশেষ আদালত ‘মিথ্যে ও সাজানো চার্জশিট’ পেশ করার জন্য সিবিআইকেই কাঠগড়ায় তুলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪২
Share:

অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় টুজি স্পেকট্রাম বণ্টনে দুর্নীতির মামলা করে আদালতের তোপের মুখে পড়ল সিবিআই।

Advertisement

আজ বিশেষ আদালত ‘মিথ্যে ও সাজানো চার্জশিট’ পেশ করার জন্য সিবিআইকেই কাঠগড়ায় তুলেছে। প্রাক্তন টেলিকম সচিব শ্যামল ঘোষ ও তিনটি টেলিকম সংস্থাকেও মামলা থেকে রেহাই দিয়েছেন বিচারক ও পি সাইনি। ভুল তথ্য দিয়ে আদালতকে ভুল পথে চালিত করার জন্য সিবিআইয়ের কড়া সমালোচনা করেছেন বিচারক। সিবিআই অধিকর্তাকে তাঁর নির্দেশ, কোন কোন অফিসার এই ধরনের ভুল তথ্য সাজিয়ে চার্জশিট পেশ করেছেন, তার তদন্ত হোক।

মনমোহন সিংহ সরকারের আমলে টুজি স্পেকট্রাম বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগের জেরে খারিজ হয় ১২২টি টুজি লাইসেন্স খারিজ হয়। ওই মামলার অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা এবং ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি। কিন্তু তার আগে বাজপেয়ী জমানাতেও টুজি স্পেকট্রাম বণ্টনে দুর্নীতি হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিল সিবিআই।

Advertisement

আদালতের এই নির্দেশকে নিজেদের ‘রাজনৈতিক জয়’ হিসেবেই দেখছে বিজেপি। দলের নেতারা দাবি তুলেছেন, কংগ্রেসের নির্দেশেই এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা সাজিয়েছিল সিবিআই। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নিজে এ বিষয়ে কলম ধরেছেন। জেটলির অভিযোগ, কপিল সিব্বল সেই সময় নিজেদের দুর্নীতির মধ্যে নিজের পছন্দের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে বেছে নিয়ে টেলিকম ক্ষেত্রে এনডিএ-র দুর্নীতি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। তার জন্য এক জন সৎ আমলা শ্যামল ঘোষ ও প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী প্রয়াত প্রমোদ মহাজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আজ আদালত বলে দিয়েছে, সেই অভিযোগ অসত্য ও সাজানো তথ্যের ভিত্তিতে হয়েছে। আদালতকে বিভ্রান্তও করা হয়েছে।

বাজপেয়ী জমানায় তিনটি বেসরকারি সংস্থাকে অতিরিক্ত স্পেকট্রাম বন্টনের ফলে রাজকোষের প্রায় ৮৪৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল সিবিআই। সেই সময়ে টেলিকম মন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত প্রমোদ মহাজন। ওই তিনটি সংস্থার পাশাপাশি তৎকালীন টেলিকম সচিব শ্যামল ঘোষের বিরুদ্ধেও চার্জশিট পেশ হয়। অভিযোগ ছিল, টেলিকম সচিব জলের দরে তিনটি সংস্থাকে স্পেকট্রাম বণ্টন করেন। শ্যামলবাবুর পাল্টা যুক্তি ছিল, এর ফলে সরকারি সংস্থা এমটিএনএল ও বিএসএনএল-ও লাভবান হয়েছিল। তিনটি টেলিকম সংস্থাও সিবিআইয়ের অভিযোগের জবাবে পাল্টা যুক্তি পেশ করে।

আজ বিচারক সাইনি বলেন, ‘‘এই চার্জশিট সাজানো ও মিথ্যে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই। ভুলে ভরা। আদালতকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টায় তৈরি।’’ সেই মন্তব্যের জেরেই জেটলি বলেছেন, ‘‘আমি গোড়া থেকেই বলে আসছি প্রাক্তন টেলিকম সচিব শ্যামল ঘোষের বিরুদ্ধে সাজানো তথ্য দিয়ে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক নির্দেশে যে সিবিআই অফিসাররা কাজ করেছিলেন, আজ তাঁদের বিরুদ্ধেই তদন্ত হবে।’’ জেটলির প্রশ্ন, যে মন্ত্রীরা এই ষড়যন্ত্র করেছিলেন তাঁদের কী হবে? এমনকী এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, যিনি অবসরের পর নতুন কাজ পাওয়ার জন্য এতে সামিল ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধেই বা কি পদক্ষেপ করা যায়?

শুধু টুজি মামলাই নয়, ক’দিন আগে কফিন কেলেঙ্কারি মামলাতেও ক্লিনচিট দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় সেই সময়ের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছিল। এখন তিনি শয্যাশায়ী। আবার গত কালই গুজরাতের বরখাস্ত হওয়া আইপিএস সঞ্জীব ভাটের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে আজ দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসেন মোদী সরকারের মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। তিনি বলেন, ‘‘এত বছর ধরে কংগ্রেস মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা করে এসেছে। সাজানো মামলায় সঞ্জীব ভাটকে ঘুঁটি করে কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীকে ১২ বছর ধরে লাগাতার আক্রমণ করেছে। টুজি মামলাতেও কপিল সিবল নিজেদের দায় ঢাকতে এনডিএ সরকারকে মিথ্যা মামলায় টেনে এনেছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন