আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল চিত্র।
তাঁরা তো পড়তে এসেছেন। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, নিট পরীক্ষায় পাশ করে হরিয়ানার ফরিদাবাদের আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ড এবং জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জড়িয়ে যাওয়া সেই ডাক্তারি পড়ুয়াদের এখন প্রশ্ন, ‘‘আমরা তো পড়তে এসেছি। নিজেদের কেরিয়ার গড়তে এসেছি। আমাদের অপরাধটা কোথায়?’’
আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জাওয়াদ সিদ্দীকী ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ), দিল্লি, জম্মু-কাশ্মীর এবং হরিয়ানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত চলাচ্ছে। তার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন চলছে। কিন্তু যে ভাবে ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গোপন কীর্তি এবং দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে এবং যে ভাবে ক্রমাগত নানা আইনি জটিলতায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছে আল ফালাহ্, তা পড়ুয়া এবং তাঁদের অভিভাবকদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। পড়ুয়াদের বেশির ভাগই এখন আতঙ্কে রয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে না তো?
আরও যে ঘটনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তারি পড়ুয়াদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে তা হল, দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ড এবং ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধারের বিষয়টিও ঘটনাচক্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। যে ‘ডক্টর টেরর মডিউল’-এর হদিস মিলেছে এবং যে চিকিৎসকদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে জড়িত ছিলেন বলে সূত্রের খবর। আর সে কারণেই তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে জঙ্গিরা একটা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছিল। ইতিমধ্যে অনেক পড়ুয়াকেই তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সেই পর্ব এখনও চলছে। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, এই ঘটনা তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে ভুগছেন। এক ডাক্তারি পড়ুয়ার কথায়, ‘‘যদি আগামি কালই এই কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে। পাঁচ বছর ধরে নিটের প্রস্তুতি, লাখ লাখ টাকা খরচ করে পড়াশোনা, সবই জলে যাবে। আমরা এমনই একটি ব্যাচ যে, এর পর কোনও হাসপাতালই আমাদের ডিগ্রিতে বিশ্বাস বা আস্থা রাখবে না।’’ উত্তরপ্রদেশে বাড়ি ওই পড়ুয়ার। তাঁর পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন তিনি।
আল ফালাহ্ দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে তদন্তের কেন্দ্র হয়ে উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিন্তু দাবি করছেন, এই কলেজে ১৫০টি এমবিবিএসের আসন ভর্তি হয়ে গিয়েছে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য। এক পড়ুয়ার বাবা রাজেশ শর্মা সংবাদসংস্থাকে বলেন, ‘‘এই কলেজে পড়া সব চিকিৎসককে জঙ্গি বলে একটা ধারণা তৈরি করে ফেলাটা অন্যায়। যারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছে, তারা কী অপরাধ করল? কয়েক জনের অপরাধের বোঝা কেন অন্য পড়ুয়ারা বইবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি, সুনাম নষ্ট হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমি আমার কন্যাকে যে মূল্যবোধ শিখিয়েছি, তা বিফলে যাবে না বলেই আশা করি।’’ একই কথা শোনা গিয়েছে অন্য পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কণ্ঠে। ফলে ৬০০ ডাক্তারি পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবকদের মধ্যে।