কার্গিলের একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে মহিলাদের লাইন। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই
বিচ্ছিন্নতাবাদী ও মাওবাদীদের হুমকি সত্ত্বেও সফল হল গণতন্ত্র। জম্মু-কাশ্মীর ও ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোটের প্রথম পর্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরে প্রথম দফায় ৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। ওই রাজ্যে আগে কখনও এত বেশি হারে ভোট পড়েনি। জম্মু-কাশ্মীরে ২০০৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৬৪.৯৭ শতাংশ ও লোকসভা নির্বাচনে ৫২.৬৩ শতাংশ। ঝাড়খণ্ডে প্রদত্ত ভোটের হার ৬১.৯২ শতাংশ।
অথচ আতঙ্কের কারণ ছিল যথেষ্ট। কাশ্মীরে যথারীতি ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল হুরিয়ত-সহ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি। প্রবল ঠান্ডা ও জঙ্গি হানার ভয়ও ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৫টি বিধানসভা কেন্দ্রের বুথগুলিতে লাইন দিয়েছেন দলে দলে মানুষ। প্রধান নির্বাচনী অফিসার জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের সাতটি জেলায় ১৭৮৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে আজ। তার মধ্যে ৮৫টি সংবেদনশীল ও ৫৫৮টি অতি সংবেদনশীল এলাকা ছিল। তবে কোনও জঙ্গি হানার খবর মেলেনিএ দিন। গান্ডেরবাল জেলার বারসু এলাকায় দু’টি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ফলে কিছুক্ষণের জন্যস্থগিত ছিল ভোটগ্রহণ। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের ভোটগ্রহণশুরু হয়। এই প্রথম ন্যাশনাল কনফারেন্স, জম্মু-কাশ্মীর পিপল্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে চতুর্মুখী লড়াই হল জম্মু-কাশ্মীরের ভোটে।
ভোট নিয়ে প্রবল উৎসাহ দেখা গিয়েছে ভূস্বর্গের বাচ্চা-বুড়ো সকলের মধ্যেই। এ বারই প্রথম ভোট দিলেন গান্ডেরবাল জেলার সালুরা গ্রামের বাসিন্দা সুমাইয়া। বছর বিশেকের তরুণী জানালেন, তাঁর মতো যাঁরা প্রথম ভোটার তাঁদের উৎসাহ বেশ বেশিই। ইভিএম-এর কথা শুনলেও এই প্রথম চোখে দেখলেন সুমাইয়া। তাঁর কথায়,“পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছি। যে সব নেতারা আমাদের এলাকাকে লুটেপুটে খাচ্ছে তাদের তাড়াতে চাই।”
উৎসাহ কম নয় লার এলাকার ভোটার হাজি মহম্মদ আহসানের। বছর ছিয়ানব্বইয়ের আহসান বুথে এসেছিলেন নাতির হাত ধরে। তাঁর বক্তব্য, “আমি প্রতি বারই ভোট দিই। দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা মেটানোর জন্যই ভোট দেওয়া উচিত। বয়কট করে লাভ কী ?”
জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হানার আশঙ্কা ছিল। আজ তাদের গতিবিধির বিশেষ কোনও খবর জানায়নি নিরাপত্তাবাহিনী। কিন্তু ঝাড়খণ্ডে বাহিনীর উপরে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে মাওবাদীরা।
ওই রাজ্যের পলামু, চতরা, গুমলা, লোহারডাগা, লাতেহার ও গঢ়বা ছ’টি জেলার ১৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয় আজ। চতরার ডিসি অমিত কুমার জানিয়েছেন, এঘারা এলাকার একটি স্কুলে জঙ্গিরা ২৫ কিলোগ্রাম ওজনের কৌটো বোমা পুঁতে রেখেছিল। নিরাপত্তাবাহিনীর উপর আচমকা আঘাত হানতে ভোটকেন্দ্রের চারপাশে তারা লুকিয়েও ছিল। কিন্তু আজ ভোট শুরুর আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী সেই বোমা নিষ্ক্রিয় করে। বেগতিক দেখে মাওবাদীরা সরে যায়। পরে ভোট কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত করা হয়। যদিও এলাকার ৬০০ জন ভোটারের কেউ সেখানে ভোট দিতে যাননি। ফলে ওই কেন্দ্রে ফের ভোটগ্রহণ করা হবে কি না, তা নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে প্রশাসন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সন্ধে পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে। সকালে ছতরপুরের দু’টি বুথে ইভিএম ভাঙচুর করা হয়। সেই দু’টি জায়গায় ফের ভোটগ্রহণ করা হবে।
এ দিকে, গঢ়বায় কংগ্রেস প্রার্থীর গাড়িতে পাথর ছোড়ার খবর মিলেছে। পলামুর কয়েকটি এলাকা থেকে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ সকাল থেকে সেখানে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নেপাল গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকেই টুইটারে জম্মু-কাশ্মীর ও ঝাড়খণ্ডের মানুষকে ভোট দিতে ফের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “জম্মু-কাশ্মীর এবং ঝাড়খণ্ডে ভোট শুরু হল। ওই দুই রাজ্যের ভাই-বোন, বিশেষত তরুণ-তরুণীদের কাছে আমার আর্জি, সবাই গিয়ে ভোট দিন।”