ডিটেনশন ক্যাম্পে থেকেই প্রাণ গেল ৭৫ বছরের বৃদ্ধ দুলু শব্দকরের।
৯ বছর আগে তাঁকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল একতরফা রায়ে ‘বিদেশি’ বলে রায় দিয়েছিল। নোটিশ পেয়েও আদালতে হাজির না হওয়ার জন্যই তাঁকে কয়েক মাস আগে জেলে যেতে হয়। আর মামলা লড়বেনই বা কী করে! দিনমজুরি খেটে স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে সংসার চালিয়েছেন। বার্ধক্যের দরুন যখন কাজ জুটছিল না, তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভিক্ষা করতেন। ডাউটফুল বা ডি-ভোটার, বাংলাদেশি, এনআরসি ইত্যাদি নানা কথা শুনলেও সে সব ঠিকঠাক বুঝে ওঠার ফুরসত মেলেনি দুলুর। তাঁর দিনমজুর ছেলে চরিত্র শব্দকর মাঝেমধ্যে এ সব প্রসঙ্গ তুলতে চাইলে দুলুবাবু প্রবোধ দিতেন, ভিখারিকে কে আর ধরে নিয়ে জেলে পুরবে!
তবু চরিত্র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন। কাগজপত্র দিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। এরপরই ২০১৫-র সেপ্টেম্বরে ভিখিরি দুলু শব্দকরকে হাইলাকান্দি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পেই ছিলেন। একে বার্ধক্য, তার উপর স্ত্রী-পুত্রের কথা ভেবে তিনি মানসিকভাবে ভেঙেও পড়েন।
জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ক’দিন থেকেই শরীর ভাল যাচ্ছিল না দুলুবাবুর। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাঁর যক্ষ্মা হয়েছে বলে জানান। ওষুধপথ্য শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দুলুবাবুর মৃত্যু গোটা পরিবারকে নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। বাবা বিদেশি বলে চিহ্নিত হওয়ায় ছেলে চরিত্রের বিরুদ্ধেও সন্দেহভাজন বিদেশি হিসেবে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তা এখন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
শব্দকর পিতা-পুত্রের হয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছেন হাইলাকান্দির পৃথ্বীশ দাস। তিনি জানান, দুলুবাবুকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে মামলা আদালতে ওঠার আগেই প্রাণ হারাতে হল তাঁকে।
এই ঘটনায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি (সিআরপিসি)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিধায়ক দাসপুরকায়স্থ বলেন, ডি-ভোটার, বিদেশি ইত্যাদি বলে অসম সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। একে তিনি ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেন। বিধায়কবাবুর কথায়, দুলু শব্দকর একজন প্রকৃত ভারতীয়। একতরফা রায়ে ২০০৭ সালে তাঁকে বিদেশি বলে রায় দেওয়া হয়। পরে তাঁকে শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে পোরা হয়। তাঁর পরিবার গৌহাটি হাইকোর্টে আপিল করলেও তার নিষ্পত্তি হয়নি। ক্ষোভ জানিয়েছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনও। সংগঠনের জেলা সম্পাদক পরিতোষ দে বলেন, ‘‘এ বড় দুর্ভাগ্যজনক। বিষয়টি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার জন্য আগামী রবিবার বেলা ১১টায় বঙ্গভবনে নাগরিক সভা ডাকা হয়েছে।’’