জুলাই থেকেই নয়া হারে ভাতা, চওড়া হাসি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের

আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে শহরের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী ২৪, ১৬ ও ৮ শতাংশ হারেই বাড়ি ভাড়া ভাতা মিলবে। যার অর্থ, বাড়ি ভাড়া ভাতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের দাবি পুরোপুরি মানল না মোদী সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০৩:৪৮
Share:

এই সিদ্ধান্তে ৪৮ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী উপকৃত হবেন।

আগামী ১ জুলাই থেকেই নতুন হারে বাড়ি ভাতা ও অন্যান্য ভাতা পাবেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা। নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই ঘোষণায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মুখে হাসি ফুটলেও মুখ বেজার হয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের। কারণ তাঁদের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের এখনও কোনও খবর নেই।

Advertisement

আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে শহরের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী ২৪, ১৬ ও ৮ শতাংশ হারেই বাড়ি ভাড়া ভাতা মিলবে। যার অর্থ, বাড়ি ভাড়া ভাতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের দাবি পুরোপুরি মানল না মোদী সরকার। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত, মহার্ঘ ভাতার হার ২৫ শতাংশ ছুঁলে বাড়ি ভাড়া ভাতা বেড়ে হবে ২৭, ১৮ ও ৯ শতাংশ। আবার মহার্ঘ ভাতা ৫০ শতাংশে পৌঁছলে তা বেড়ে ৩০,২০ ও ১০ শতাংশ হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি প্রথম থেকেই এই হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা বা এইচআরএ চাইছিলেন। কারণ এখন তাঁরা ওই হারেই ভাতা পান। তা না মানলেও নিচু তলার কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুরাহার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘নিচু তলার কর্মীদের ওই হারে ভাতা যথেষ্ট হবে না ভেবে ন্যূনতম পরিমাণ ঠিক করা হয়েছে। শহরের শ্রেণি বিভাজন অনুযায়ী তা ৫৪০০ টাকা, ৩৬০০ টাকা ও ১৮০০ টাকা ঠিক হয়েছে।’’

সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে নতুন বেতন কাঠামো আগেই কার্যকর হলেও নতুন হারে ভাতা চালু হয়নি। কর্মচারীদের আপত্তিই ছিল তার প্রধান কারণ। কমিশনের সুপারিশ ছিল, ১৯৬ টি বিশেষ ভাতার মধ্যে ৫৩টি ভাতা বন্ধই করে দেওয়া হোক। আজ মন্ত্রিসভা অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১২টি ভাতা বন্ধ হবে না। এ ছাড়া রেলের কর্মচারীদের ১২টি ভাতা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পরে হবে। সেনা ও আধাসেনা বাহিনীর জন্যও বেশ কিছু ভাতা বাড়ানো হয়েছে। সিয়াচেনে নিযুক্ত জওয়ানদের মাসিক ভাতা ১৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা হচ্ছে। অফিসারদের মাসিক ভাতা ২১ হাজার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৪২ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ঢিল পড়তেই গর্জন শুরু ড্রাগনের

আজকের সিদ্ধান্তে ৪৮ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী উপকৃত হবেন। জেটলি বলেন, পেনশনভোগীদের জন্য সুখবর হল, চিকিৎসা ভাতা মাসে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। এমনিতেই বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে প্রতি বছর সরকারের ২৯,৩০০ কোটি টাকা খরচ হতো। নতুন হারে ভাতা দিতে গিয়ে আরও ১৪৪৮.২৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে বাড়তি বোঝার পরিমাণ ৩০,৭৪৮.২৩ কোটি টাকা।

কেন্দ্রে সপ্তম বেতন কমিশন পুরো কার্যকর হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নতুন করে উষ্মা দেখা দিয়েছে। কারণ রাজ্যের ষষ্ঠ বেতন কমিশনই কবে কার্যকর হবে, তার কোনও ইঙ্গিত নেই। মহার্ঘ ভাতার ক্ষেত্রেও অনেক পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রের সঙ্গে এই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার তফাত দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ। হিসেব করলে দেখা যাবে, গত ছ’বছরে এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রায় ১ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ক্ষতি স্বীকার করেছেন। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘এখন এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কাজে যোগ দিলে ১৪ হাজার ৬৮০ টাকা পান। আর কেন্দ্রীয় সরকারে একই পদে বেতন মেলে ২৬ হাজার ৯৯৪ টাকা। অর্থাৎ, ১২ হাজার টাকা বেশি।’’

রাজ্যের বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত কর্মচারী সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলছি। এর আগে কমিশনের কাজ এত বিস্তারিত ভাবে হয়নি। এতে হয়তো একটু সময় লাগছে কিন্তু ফল ভালই হবে।’’ কিন্তু বিজয়বাবুর অভিযোগ, ‘‘২০১৫-এর ২৭ নভেম্বর ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠনের পর থেকে কেবল মেয়াদই বৃদ্ধি করে চলেছে রাজ্য সরকার। রিপোর্ট দেওয়ার নাম নেই। নভেম্বরে বর্ধিত মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার মধ্যে কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়বে কি না, সংশয়ে কর্মীরাই।’’ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পর রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। রাজ্যের যুক্তি, কেন্দ্রের এ বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। কারণ কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিলে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মধ্যেও প্রত্যাশা তৈরি হয়। অথচ সব রাজ্যের আর্থিক ক্ষমতা একরকম নয়। রাজ্যকে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন