৬২ বছর বয়সে ধরা পড়েছিল মৃগী। বর্তমানে তাঁর বয়স ৮৬। মৃগীকে হারিয়েছেন তো বটেই, গত ২৩ বছর ধরে প্রায় চার লক্ষ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছেন বাইলাহাল্লি রঘুনাথ জনার্দন।
৬৮ বছর বয়সে শুরু করলেন মাউন্টেনিয়ারিং। ২০ বার ট্রেকে গিয়েছেন হিমালয়ে, ১৪ বার পশ্চিমঘাটে গিয়েছেন, জয় করেছেন মাউন্ট কৈলাশ শৃঙ্গ।
৭২ বছর বয়সে শুরু করেছেন দৌড়। এর পর থেকে ১৬টি পূর্ণ দৈর্ঘের ম্যারাথন আর ৬৪টি হাফ ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। ৬০ বার দৌড়েছেন ১০ কিমি। ১২ ঘণ্টায় দৌড়েছেন ৬০ কিমি। পরবর্তী লক্ষ্য ৪ ঘণ্টায় ১০০ কিমি দৌড়নো।
৩৪ বছর ধরে রেলের কর্মী ছিলেন জনার্দন। রেল কলোনির অনুর্বর জমিতে ফসল ফলিয়ে তাক লাগিয়ে গিয়েছিলেন অর্গ্যানিক ফার্মিংয়ের মাধ্যমে। মোঘলসরাইয়ে রেল কলোনিগুলি তাঁর মডেলই অনুসরণ করে বাগান করতে শুরু করে।
মেয়ের বিয়ের কথা বলতে দুবাইয়ে গিয়েছিলেন। বয়স তখন ৬২, ১৯৯৫ সালের মার্চ মাস সেটা। রাস্তায় সংজ্ঞা হারান জনার্দন। ধরা পড়ে মৃগী। বাকি জীবন এই রোগ নিয়ে বাঁচা মানে পরনির্ভরশীল হওয়া, তখনই বুঝেছিলেন তিনি। কিন্তু বরাবরের চটপটে মানুষটা একেবারেই এই জীবন মানতে পারছিলেন না।
কিছুদিন ওষুধ খেয়ে ক্লান্ত হয়ে ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ এক দিন উঠে পড়েন। যেখানে দূরে গেলে একা রাস্তাঘাটে চলাফেরা বারণ, সেখানে প্রথম দিনই ২০ কিমি এক টানা হেঁটে বাড়ি ফিরে আসেন। এ ভাবে রোজ একেবারে ভোরে কেউ ওঠার আগেই হাঁটতে শুরু করতেন তিনি।
তাঁর সেতারবাদক ছেলের অনুষ্ঠান ছিল কর্নাটকের কেমপেগৌড়ার কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন জনার্দনের ছেলে। ৪০ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রথম বার সাইকেলে উঠে তিনি ৩০ কিমি পথ পেরিয়ে পৌঁছন সেখানে। সাইকেলটি তিনিই ছেলেকে দিয়েছিলেন। ওই দিন সব মিলিয়ে ৭২ কিমি সাইকেল চালান।
পরের সপ্তাহে চালান আরও ৭৭ কিমি। সেটাও ভোরবেলা এবং লুকিয়ে। কর্নাটকের বাইলাহালিতে নিজের গ্রামে চলে যান সাইকেল চালিয়ে, প্রায় ১৩২ কিমি। এ ভাবেই একেবারেই রোগমুক্ত হয়েছেন বলে জানান জনার্দন। কারণ ওষুধ আর নাকি খাননি তিনি।
সকালে উঠে গরম জল ও মধু, অনেকগুলো ড্রাই ফ্রুটস (কাঠবাদাম, কাজু, কিসমিস, খেজুর) খান তিনি। দুপুরে খান সবজি ও সনাতনী রান্না, এ ছাড়াও এক গ্লাস দুধ। এ ভাবেই দিব্যি সুস্থ রয়েছেন, জানান জনার্দন।
এক বার এক দুষ্কৃতী ছুরি নিয়ে হামলা করে তাঁর উপর। তার মুখে ক্যামেরার ফ্লাশ দিয়ে আলো ফেলে সাইকেল নিয়ে পালান জনার্দন। এরকম আরও হয়েছে। তবে থেমে থাকেননি। প্রতি ঘণ্টায় ১৫ কিমি গতিতে রোজ প্রায় ৫০ কিমি সাইকেল চালান তিনি।
ভার্টিকাল রানেও অংশ নিয়েছেন এই ‘তরুণ’। চার বার ৩২ তলা বাড়ি, এক বার ৫২ তলা বাড়ি, এক বার ৬৪ তলা বাড়িতেও দৌড়ে উঠেছেন। দুবাইয়ে ২৮০ মিটারের একটি বাড়িতে ১৬০০ সিঁড়ি দিয়ে উঠেছিলেন ২২ মিনিটে।