ফাইল চিত্র।
কলকাতায় কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমকে ঘিরে কংগ্রেসপন্থী আইনজীবীদেরই বিক্ষোভের ঘটনায়, রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের পাশে দাঁড়ালেন এআইসিসি-তে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এ চেল্লাকুমার। তাঁর বক্তব্য, প্রবীণ নেতাদের কংগ্রেসের কর্মীদের অসম্মান করা উচিত নয়। চেল্লাকুমার চিদম্বরমেরই রাজ্য তামিলনাড়ু থেকে লোকসভার সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘কেউ যত বড় নেতা বা আইনজীবীই হোন না কেন, তাঁর উচিত ছিল মামলা লড়তে যাওয়ার আগে সৌজন্যের খাতিরে স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া। বিশেষ করে যেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীই মামলাকারী।’’
কংগ্রেসের অন্দরমহলে নেতারা মনে করছেন, কলকাতা হাই কোর্টের সামনে বুধবারের ঘটনায় দলের অন্দরে সমন্বয়ের অভাবই ফের প্রকট হয়ে উঠেছে। যার প্রধান কারণ নেতৃত্বের সঙ্কট। রাহুল গান্ধী পর্দার আড়ালে থেকে দল চালাচ্ছেন। কিন্তু কোনও দায়িত্ব নিতে রাজি নন। ফলে দলের কোন দফতর কখন কোন কাজ করছে, কোন নেতা কী করছেন, তার উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কংগ্রেস হাই কমান্ড ও রাজ্য নেতৃত্ব প্রায়ই বিপরীত অবস্থান নিচ্ছে। চিদম্বরমকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনায় নতুন করে কংগ্রেসের অন্দরে ঝড় উঠেছে। গোটা ঘটনায় দলেরই মুখ পুড়েছে এবং তার জন্য কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের কর্তৃত্বের অভাবকেই দায়ী করছেন দলের নেতারা।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি রাজ্য সরকারের হয়ে মামলা লড়ছেন। এমনকি তাঁরা কয়লা পাচারের মামলাতেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে লড়ছেন। এ দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল গোয়া, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসে ভাঙন ধরাচ্ছে। গোয়া, মুম্বইয়ে গিয়ে কংগ্রেসকেই নিশানা করছেন। অথচ তার আগে পর্যন্ত জাতীয় স্তরে কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এগোতে চাইছিল।
এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, ‘‘উল্টো দিকে, পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। জাতীয় স্তরে কংগ্রেস মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক কাজে লাগানোর অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু অধীর চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি ঘটনায় সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন।’’ চিদম্বরমকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনায় অধীর জানিয়েছিলেন, বিক্ষোভের পরে তিনি ঘটনার কথা জানতে পেরেছেন। এআইসিসি-র এক নেতার প্রশ্ন, ‘‘রাজ্যের কংগ্রেসের কর্মীরা এআইসিসি-র গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, অথচ প্রদেশ সভাপতি তা জানেন না। তা হলে প্রদেশ কংগ্রেস চালাচ্ছেন কে?’’
সারদা ও অন্যান্য চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলার পিছনে প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। মমতা সরকারের হয়ে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে কপিল সিব্বল সুপ্রিম কোর্টে বলেছিলেন, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আট বছর পরে মেট্রো ডেয়ারি মামলায় বিলগ্নিকরণে দুর্নীতির অভিযোগ করে অধীর চৌধুরী মামলা করেছেন। বেসরকারি সংস্থা কেভেন্টার্সের হয়ে মামলা লড়তে গিয়েছিলেন চিদম্বরম। সেখানেই তাঁকে কংগ্রেসপন্থী আইনজীবীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। চিদম্বরম এ দিনও অনলাইন শুনানিতে সওয়াল করেছেন।
দিল্লিতে কংগ্রেসের লিগাল সেলের নেতাদের বক্তব্য, অধীর যখন মামলা করছেন, তখন দলের লিগাল সেলের সঙ্গে আলোচনা করেননি কেন? উল্টো দিকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন, চিদম্বরম যখন দেখছেন অধীর মূল মামলাকারী, তিনি কেন মামলা লড়ার আগে অধীরের সঙ্গে কথা বললেন না? এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, সিব্বলের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ হলে সমস্যা ছিল না। কারণ তিনি এখন ঘোষিত ভাবে দলের বিক্ষুব্ধ নেতা। কিন্তু চিদম্বরম শুধু প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নন। প্রশান্ত কিশোরের সুপারিশ খতিয়ে দেখার জন্য সনিয়া গান্ধীর তৈরির কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তাঁকে গোয়াতেও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের জন্য অর্থনীতি বিষয়ক প্রস্তাব কমিটিরও তিনি প্রধান। গোটা ঘটনায় সার্বিক ভাবে কংগ্রেসের অন্দরের ছন্নছাড়া ছবি বাইরে বেরিয়ে এল।