মঞ্চে উঠতেই রূপমকে ঘিরে হাততালির ঝড়

রূপম ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণা হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল শিলচর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এনআইটি) সমাবর্তন হল। রূপম এলেন, ডিরেক্টর এন ভি দেশপাণ্ডের হাত থেকে বি টেক ডিগ্রির শংসাপত্র নিলেন। হাততালি আর থামতেই চায় না! এই বছরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন, এমন নয়। সেরা ছাত্র হিসেবে স্বর্ণপদক পেয়েছেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেরই প্রান্তিকা শর্মা। জিমে বা খেলার মাঠে কোনও দিন যেতে পারেননি।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

ডিরেক্টরের হাত থেকে শংসাপত্র নিচ্ছেন রূপম।—নিজস্ব চিত্র।

রূপম ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণা হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল শিলচর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এনআইটি) সমাবর্তন হল। রূপম এলেন, ডিরেক্টর এন ভি দেশপাণ্ডের হাত থেকে বি টেক ডিগ্রির শংসাপত্র নিলেন। হাততালি আর থামতেই চায় না!

Advertisement

এই বছরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন, এমন নয়। সেরা ছাত্র হিসেবে স্বর্ণপদক পেয়েছেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেরই প্রান্তিকা শর্মা। জিমে বা খেলার মাঠে কোনও দিন যেতে পারেননি। সুতরাং রূপমের অন্যান্য বিষয়ে সেরার পুরস্কার পাওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। আর তিনি ছাত্রনেতাও নন। তবু তাঁকে ঘিরেই যাবতীয় উচ্ছ্বাস এনআইটি-র সমাবর্তন হল।

মা মিতা ভট্টাচার্যের চোখে জল। আনন্দাশ্রু, এক যুদ্ধ জেতার অনন্দ। তাঁর কথায়, ‘‘বিরাট যুদ্ধে জিতলাম আমরা।’’ সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত বলে কোনও স্কুল রূপমকে ভর্তি করতে চাইত না। তাঁর পা দুটি অসাড়। দাঁড়াতে পারেন না। ডান হাতও অকেজো। শেষ পর্যন্ত ডিব্রুগড়ের এক স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেন, ভর্তি হতে পারে। তবে একটি শর্ত আছে। সপ্তাহে এক দিন আসবে। সে দিনই পুরো সপ্তাহের পড়া বুঝে নেবে। বাড়িতে বসে সে সব তৈরি করবে। অগত্যা তাতেই রাজি হন মা মিতাদেবী ও বাবা সুভাষ ভট্টাচার্য। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মন জয় করতে রূপমের বেশি দিন সময় লাগেনি। মাধ্যমিকে ৮২%, উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন ৭৮% নম্বর। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পাশ করে যখন শিলচর এনআইটি-তে রূপম এলেন, সেখানেও এক চিত্র। প্রথম দিকে সবাই বলছিলেন, বি-টেক কী আর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক! ক্লাসের পর ক্লাস, ল্যাবরেটরি। এত ছোটাছুটি কী করে করবেন! জবাব দিয়েছেন রূপম ভট্টাচার্য।

Advertisement

আজ বি টেক ডিগ্রি নিয়েই রূপম পুরো কৃতিত্ব দেয় মাকে। একই কথা এনআইটি-র সকলের মুখে মুখে। বাবা বিদ্যুত্ বিভাগে চাকরি করতেন। হঠাত্ এমনই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে স্বেচ্ছাবসর নিতে হয়। ক’বছর ধরে শয্যাশায়ী।

মিতাদেবী রূপমকে ডিব্রুগড় থেকে নিয়ে আসেন, এনআইটি-তে ভর্তি করেন। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোয়ার্টার মঞ্জুর করান। মা-ছেলের আগ্রহ দেখে ডিরেক্টর দেশপাণ্ডে রূপমের জন্য গাড়িরও ব্যবস্থা করেন।

পাঁজাকোলা করে গাড়িতে তুলে ছেলেকে ক্লাসে নিয়ে আসতেন মিতাদেবীই। যতক্ষণ ক্লাস চলত, বাইরে ঠায় বসে থাকতেন। শেষে ডিরেক্টর দেশপাণ্ডেই এনআইটি-র তহবিল থেকে রূপমকে কিনে দেন জয়স্টিক কন্ট্রোল পাওয়ার হুইল চেয়ার। আজ সেটি চড়েই রূপম মঞ্চে এসেছিলেন ডিগ্রি নিতে। রূপমের কথায়, ‘‘এই চেয়ার বড় সুবিধে করে দিয়েছে। এক বার বসিয়ে দিলে এ ঘর-ও ঘর করতে পারি।’’

এখানেই থামতে চান না রূপম। এরই মধ্যে গেট (গ্র্যাজুয়েট অ্যাপটিটিউড টেস্ট অব ইঞ্জিনিয়ারিং) পাশ করেছেন। এম টেক-এ ভর্তি হতে অসুবিধে নেই। তবে তাঁর ইচ্ছে, এ বার আর শিলচর নয়। দিল্লি যাবেন তিনি। পড়তে চান এমবিএ। এই শরীরে এমন স্বপ্ন! রূপম বললেন, ‘‘আমি নিজেকে কখনও প্রতিবন্ধী ভাবিইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন