সন্তান-সম্পত্তি ছেড়ে সন্ন্যাসের পথে দম্পতি

পরিবার সূত্রের খবর, মেয়ে যখন আট মাসের, সন্ন্যাসগ্রহণের প্রস্তুতি তখন থেকেই শুরু। সেই সময় থেকেই রাঠৌর দম্পতি আলাদা থাকতে শুরু করেন। কাজেই পরিজনদের কাছে এই সিদ্ধান্ত মোটেই আকস্মিক নয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ভোপাল শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪৩
Share:

সপরিবার: মেয়েকে নিয়ে রাঠৌর দম্পতি। ফাইল চিত্র

তিন বছরের মেয়ের মায়া আর একশো কোটি টাকার সম্পত্তির মোহ ছেড়ে শেষমেশ সন্ন্যাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মধ্যপ্রদেশের এক জৈন দম্পতি।

Advertisement

জৈন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ত্যাগের নজির বিরল নয় একেবারেই। তবু ৩৫ বছরের সুমিত রাঠৌর ও তাঁর স্ত্রী ৩৪ বছরের অনামিকার এই সিদ্ধান্তে হতবাক ওই সম্প্রদায়ের অনেকেই।

রাজধানী ভোপাল থেকে ৪০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নিমাচে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ভাবে অত্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত রাঠৌর পরিবার। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অনামিকা বরাবর মেধাবী ছাত্রী। সুমিত লন্ডন থেকে ইম্পোর্ট-এক্সপোর্ট ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেছেন। সেখানে বছর দু’য়েক কাটিয়ে পারিবারিক সিমেন্টের বস্তার ব্যবসা সামলাতে দেশে ফেরেন। চার বছর হল বিয়ে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু কী এমন হল যে আচমকা দু’জনেই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেন?

Advertisement

পরিবার সূত্রের খবর, মেয়ে যখন আট মাসের, সন্ন্যাসগ্রহণের প্রস্তুতি তখন থেকেই শুরু। সেই সময় থেকেই রাঠৌর দম্পতি আলাদা থাকতে শুরু করেন। কাজেই পরিজনদের কাছে এই সিদ্ধান্ত মোটেই আকস্মিক নয়।

গত ২২ অগস্ট সুমিত গুজরাতের সুরাতে এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে আচার্য রামলালের যান। সেখানেই দীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত পাকা করেন তিনি। আচার্য স্ত্রীর অনুমতি আনতে বলেন। স্ত্রী অনুমতি তো দেনই, সঙ্গে তিনিও দীক্ষা নেবেন বলে স্থির করেন। সুমিতের ঘনিষ্ঠ ভাই সন্দীপ বলেছেন, ‘‘মানুষ যা চায় সব আছে ওঁর। অগাধ ধনসম্পত্তি, স্ত্রী, ফুটফুটে মেয়ে। তবু সব ছেড়ে যেতে চায়। আমরা স্তম্ভিত।’’ অবাক এই ছোট্ট শহরের বাসিন্দারাও। প্রশ্ন এখন একটাই, ‘‘ওঁদের মেয়ে ইভ্যার কী হবে?’’

অনামিকার বাবা, নিমাচের প্রাক্তন বিজেপি জেলা সভাপতি অশোক চাণ্ডালিয়া জানিয়েছেন নাতনির সমস্ত ভার তাঁর। বলেছেন, ‘‘ওদের আধ্যাত্মিক যুক্তি খণ্ডাতে পারিনি। ধর্ম যাকে ডাকে, তাকে আটকানো যায় না।’’ সুমিতের বাবা, ব্যবসায়ী রাজেন্দ্র সিংহ রাঠৌরও মেনে নিয়েছেন ছেলের এই সিদ্ধান্ত। বলেছেন, ‘‘এমন হবে, জানতাম। তবে এত তাড়াতাড়ি, তা জানতাম না।’’

চলতি বছরের শুরুতেই, গুজরাতে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ছাত্র বর্শিল শাহের সন্ন্যাস নেওয়ার খবর দেশ জুড়ে আলোড়ন ফেলে। ২০১৬-র অক্টোবরে তপস্যার নামে, টানা ৬৮ দিন না খেয়ে মারা যায় আরাধনা সমাদরিয়া নামের ১৩ বছরের এক কিশোরী। এই ঘটনায় জৈনদের নির্জলা তপস্যা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল।

তবুও, রাঠৌর দম্পতির মতো দুধের শিশুকে ছেড়ে সন্ন্যাস নেওয়ার ঘটনা আগে ঘটেনি বলে জানিয়েছেন শহরের জৈন গোষ্ঠীর সদস্য প্রকাশ ভাণ্ডারী। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর সুরাটে সুধামার্গী আচার্য রামলাল মহারাজের কাছে দীক্ষা নেবেন তাঁরা। দীক্ষা নেওয়া পর্যন্ত মৌনব্রত নিয়েছেন সুমিত-অনামিকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন