পুতুল বরা নিজের বাড়িতেই গড়ে ফেলেছেন ছোট্ট স্টেডিয়াম। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর হাতে সোনালি বিশ্বকাপ। কখনও তাতে চুমু খাচ্ছেন। কখনও তুলে ধরছেন। অন্য হাতে জার্মানির পতাকা। মাঠের সবুজ ঘাসের গালিচায় জার্মান জার্সি গায়ে হেঁটে আসছেন গর্বিত পদক্ষেপে। তিনি পুতুল বরা। জার্মান ফুটবল দল অবশ্য এখনও তাঁকে চেনে না। তবে পুতুলের আশা, একদিন তারা চিনবেই এই অন্ধ ভক্তকে। না চিনলেও ক্ষতি নেই। জার্মান দলের প্রতি তাঁর অন্ধ ভালাবাসা নিঃস্বার্থ। তাই নিজের বাড়িতে তিনি রাশিয়া-২০১৮ মিনি স্টেডিয়ামই গড়ে ফেলেছেন।
বিশ্বকাপ নিয়ে গোটা বিশ্বের নজর যখন রাশিয়ার দিকে তখনই কার্বি আংলং জেলার ডিফুতে পুতুলের মিনি বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামও হাউসফুল! তাঁকে সকলে এক ডাকে জার্মান পুতুল বলেই চেনেন। ১৯৯৪ সালে বাঙালি বন্ধু কলকাতা থেকে স্কচের বোতল উপহার দিয়েছিলেন পুতুলবাবুকে। ইচ্ছে ছিল বিশ্বকাপ জার্মানি জিতলে তা দিয়ে উদযাপন হবে। কিন্তু সে বছর আশায় জল ঢালে বুলগেরিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানিকে হারিয়ে দেয় তারা। পুতুলের প্রতিজ্ঞা ছিল ফের জার্মানি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলে তবেই ওই স্কচে হাত দেবেন। মাটিতে পুঁতে ফেলেন বোতল। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানি জেতার পরে বিশ বছরের পুরোনো পাসপোর্ট স্কচ অতি কষ্টে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করেন পুতুল।
গত বিশ্বকাপের পরেই ১৮০০ টাকা দিয়ে ফের নতুন স্কচ এনে পুঁতে রেখেছেল বরা। পছন্দের দল পঞ্চমবার জিতলে আবার হবে উৎসব। কিন্তু একলা উৎসব করলে মন ভরে না। তাই বাড়ির চত্বরেই দোতলা মিনি স্টেডিয়াম গড়ে ফেলেছেন পুতুল ও তাঁর স্ত্রী গ্রেসি মালসাওমি। দূর থেকে নজরে পড়বে রাশিয়া-২০১৮। এক তলার দেওয়াল জুড়ে রাউন্ড পর্যায়ের ক্রীড়া সূচি। দোতলায় ৫৩ ইঞ্চি এলইডি টিভি কিনে লাগিয়েছেন পুতুলবাবু। রয়েছে জার্মানির জার্সি, পতাকা। খেলা দেখতে এলে টিকিট লাগবে না। শর্ত একটাই, হতে হবে মনেপ্রাণে জার্মান সমর্থক। নকল কাপ আর ফটোশপের কেরামতিতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলকেও সাজিয়ে তুলেছেন ৫৭ বছরের বরা। স্টেডিয়ামের বিভিন্ন স্থানেও জার্মান খেলোয়াড়দের দেহে তাঁর মাথা বসানো কাট আউট।
আরও পড়ুন: রমজান শেষ, কাশ্মীরে ফের অল আউট অপারেশন, জানিয়ে দিল কেন্দ্র
আরও পড়ুন: কতটা পরিষ্কার রেলের কামরা? নজরদারি এবার হোয়াটসঅ্যাপে
সম্প্রতি পানিজুরি গ্রামে গুয়াহাটির দুই যুবককে পিটিয়ে খুন করার পরে কার্বি আংলংয়ের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে। অসমীয়া বনাম কার্বি- বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে একাংশ। কার্বিবাসী অসমীয়া পুতুল বরার পরিবার গোলাঘাট থেকে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে সেখানে এসে থিতু হয়েছিলেন। বরা জানান, ফুটবল শান্তির বার্তা দেয়। পিছিয়ে থাকা কার্বি আংলংয়ে বরাবরই ফুটবল ক্রীড়া ও বিনোদনের প্রধান রসদ। তাঁর আশা বিশ্বকাপের হাত ধরেই ফের সম্প্রীতি ফিরবে রাজ্যে।