আধার আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে যে আবেদন জমা পড়েছিল, আজ তা নিয়ে রায় স্থগিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট।
অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল এই সিদ্ধান্ত জানানোর সময়ে বলেছেন, শীর্ষ আদালতের ইতিহাসে এটিই সব চেয়ে দীর্ঘ শুনানি। জানুয়ারি থেকে শুরু করে গত চার মাসে মোট ৩৮ দিন আধার শুনানি চলেছে। এর আগে ১৯৭০ সালে কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সবচেয়ে বেশি দিন শুনানি হয়েছিল।
আধারের অসুবিধে বোঝাতে সুপ্রিম কোর্টে এ দিন শুনানি চলাকালীন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি জানান, তাঁর মা অ্যালঝাইমার্স-এ ভুগছেন। তাঁর তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধে হচ্ছে। বেঞ্চে থাকা অন্য বিচারপতিদের মধ্যে বিচারপতি এ কে সিক্রি, বিচারপতি এ এম খানউইলকর এবং বিচারপতি অশোক ভূষণও জানান, যাঁদের প্রকৃত অর্থে সুবিধে প্রয়োজন, আধারে যাচাইয়ের জটিলতায় তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।
এই সূত্রেই বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আমার মা অ্যালঝাইমার্সের রোগী। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়ের স্ত্রী হওয়ায় তাঁর পেনশন পাওয়ার কথা। যাচাইয়ের জন্য তাঁকে বুড়ো আঙুলের ছাপ দিতে হয়। প্রতি মাসে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বা তাঁর প্রতিনিধি এসে নির্দিষ্ট কিছু নথিতে মায়ের বুড়ো আঙুলের ছাপ নেন, যাতে মা পেনশনটা পেতে পারেন।’’ এর পরে তিনি বোঝান, ‘‘যাচাইয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনও সুবিধে ভোগের ব্যাপার নয়। সেবার কাজও নয়। আমাদের এই সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজে বার করা দরকার।’’
আরও পড়ুন: বৃদ্ধ বাবা-মায়ের হেনস্থায় কড়া সাজার প্রস্তাব কেন্দ্রের
প্রবীণ আইনজীবী শ্যাম দেওয়ান এ দিন শুনানির সময়ে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৯০ বছরের এক বৃদ্ধাকে তাঁর ব্যাঙ্ক হুমকি দিচ্ছে, আধারে যাচাই না হওয়ায় তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দেওয়ানের বক্তব্য, ‘‘ওই অ্যাকাউন্ট মারফত বৃদ্ধা পেনশনের টাকা পেতেন। সেই টাকা তাঁর চিকিৎসায় ব্যয় হয়, তাঁকে দেখাশোনার মতো আর কেউ নেই পরিবারে।’’ এর পরে ওই আইনজীবী বলেন, এমন আরও হাজার উদাহরণ রয়েছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বা কোনও রোগী অথবা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যাঁদের, এমন অনেকেই আধার যাচাই না করতে পারায় প্রাপ্য সুবিধে থেকে বঞ্চিত হওয়ার পথে। দেওয়ানের পরামর্শ, শিশু, পুনর্বাসন, খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি সংক্রান্ত যে কোনও সরকারি প্রকল্পকে আধার মারফত যাচাইয়ের বাইরে রাখা হোক।
আধার প্রকল্প নিয়ে যাঁরা আপত্তি তুলেছেন সেই নাগরিকদের পক্ষে শ্যাম দেওয়ান বুধবার সুপ্রিম কোর্টে বলেছেন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধারের যোগ ঘুরপথে হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বোঝান, ‘‘ধরুন, আপনি পেনশনের সঙ্গে আধার নম্বর যোগ করলেন। সেটি আপনা থেকে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল।’’ যাঁরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার যোগ করতে সম্মত নন, তাঁদের কাছে এসএমএস পৌঁছে গিয়েছে, আপনার অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার জুড়ে গিয়েছে।