কড়ি ফেললেই হাতে আধার-ঘরের চাবি

জালন্ধর শহরে ‘দ্য ট্রিবিউন’ সংবাদপত্রের স্টিং অপারেশনে এই চাঞ্চল্যকর খবর সামনে এসেছে। আধারের তথ্য কত দূর সুরক্ষিত, এতে নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, তাই নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

হাতে দশটা মিনিট আর পকেটে পাঁচশো টাকা থাকলেই যথেষ্ট। তাতেই নাকি একশো কোটি ভারতবাসীর আধার তথ্য চিচিং ফাঁক!

Advertisement

আধার কার্ডের প্রিন্ট আউট! তাও সম্ভব। খসাতে হবে আরও তিনশো।

জালন্ধর শহরে ‘দ্য ট্রিবিউন’ সংবাদপত্রের স্টিং অপারেশনে এই চাঞ্চল্যকর খবর সামনে এসেছে। আধারের তথ্য কত দূর সুরক্ষিত, এতে নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, তাই নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক চলছে। সুপ্রিম কোর্টে জারি রয়েছে মামলা। তারই মধ্যে এমন খবরে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। খবরের সত্যাসত্য অবশ্য আনন্দবাজারের পক্ষে খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। এবং আধার কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, ‘‘ভয়ের কিছু নেই। আমার-আপনার তথ্য সুরক্ষিতই রয়েছে।’’

Advertisement

সম্প্রতি জালন্ধরের এক সাংবাদিকের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ আসে যে পাঁচশো টাকা দিলেই আধার তথ্য পাওয়া যাবে। ওই সাংবাদিক জানাচ্ছেন, অনামিকা নাম নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট নম্বরে জনৈক অনিল কুমারকে হোয়াটসঅ্যাপ করেন। সে অনামিকার ই-মেল এবং মোবাইল নম্বর পাঠাতে বলে, সঙ্গে পাঁচশো টাকা। সাংবাদিক মেল আইডি, মোবাইল নম্বর পাঠিয়ে টাকা পেটিএম করে দেন। ই-মেল-এ উত্তর আসে, অনামিকা নামটি নথিভুক্ত করা হল। পাসওয়ার্ডও পাঠানো হয় আলাদা মেল-এ, যা দিয়ে আধার ওয়েবসাইটের দরজা খুলছে বলে দাবি ওই সাংবাদিকের। তাঁকে বলা হয়, আরও তিনশো টাকা দিলে পাওয়া যাবে সফ্টওয়্যার। যা কম্পিউটারে ইনস্টল করলেই আধার নম্বর দিয়ে আধার কার্ড ছাপিয়ে নেওয়া সম্ভব।

পত্রিকাটির দাবি, তাদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে চণ্ডীগড়ের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (ইউআইডিএআই) অতিরিক্ত ডিজি সঞ্জয় জিন্দল থ! তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি ও আমার ডিজি ছাড়া কারও আধার ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারারই কথা নয়। সুরক্ষায় বড় গলদ হয়েছে তার মানে।’’ এমন কারবার ফেঁদে বসল কারা? সন্দেহ করা হচ্ছে, গোড়ার দিকে আধার কার্ড করানোর কাজে লাগানো হয়েছিল, এমন বেশ কিছু লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এই কারবারিরা। দলটি গত ছ’মাস ধরে সক্রিয় রয়েছে জালন্ধরে।

যদিও ইউআইডিআই-এর তরফে পরে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘‘নাম-ঠিকানা বা বড়জোর ছবি পাওয়া গিয়ে থাকতে পারে। বায়োমেট্রিক তথ্য সুরক্ষিত রয়েছে।’’ এর আগে কেন্দ্রের প্রায় ২১০টি ওয়েবসাইটে আধারের তথ্য প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছিল। বিতর্ক হওয়ায় যা সরিয়ে দেওয়া হয়। সে সময়েও ইউআইডিআই দাবি করেছিল, তথ্য সুরক্ষিত রয়েছে। এ বার তাঁদের ব্যাখ্যা, জনগণের আধার সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলায় কিছু নির্দিষ্ট সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সার্ভারে গিয়ে আধার নম্বরের ভিত্তিতে তথ্য খুঁজে দেখতে পারে। সেই ব্যবস্থারই অপব্যবহার করা হয়েছে বলে আশঙ্কা। আধার কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই সংস্থা বা ব্যক্তির হাতে বায়োমেট্রিক তথ্য থাকে না। বস্তুত বায়োমেট্রিক তথ্য পাওয়ার কথা সাংবাদিকও বলেননি।

প্রশ্ন হল, পাঁচশো টাকায় যদি নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়, পাঁচ হাজার দিলে যে বায়োমেট্রিক তথ্য মিলবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন