দিল্লিতে সরকার গঠন

বিজেপিকে ঠেকাতে রাষ্ট্রপতির কাছে আপ

দিল্লিতে সরকার গঠনে বিজেপি যখন মরিয়া, তখন তা আটকাতে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হলেন আম আদমি পার্টির নেতৃত্ব। প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকলেও উপরাজ্যপাল নাজিব জঙ্গের সক্রিয়তার পরে দিল্লিতে সরকার গড়তে তৎপর হয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। যা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, প্রথমে নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করলেও এখন নিজেদের অবস্থান বদলে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে কৌশলী পদক্ষেপ করার পথেই হাঁটছে বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৪
Share:

রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অরবিন্দ কেজরীবাল। ছবি: পিটিআই

দিল্লিতে সরকার গঠনে বিজেপি যখন মরিয়া, তখন তা আটকাতে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হলেন আম আদমি পার্টির নেতৃত্ব।

Advertisement

প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকলেও উপরাজ্যপাল নাজিব জঙ্গের সক্রিয়তার পরে দিল্লিতে সরকার গড়তে তৎপর হয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। যা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, প্রথমে নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করলেও এখন নিজেদের অবস্থান বদলে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে কৌশলী পদক্ষেপ করার পথেই হাঁটছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে দলের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ছিল, তা-ও মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদের দুই মুখ্য দাবিদারের একজন ছিলেন হর্ষ বর্ধন। তিনি এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অন্য জন বিজয় গয়াল। তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে রাজ্যসভাতে। একই সঙ্গে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ স্তরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনও সেরে ফেলা হয়েছে। দলের এক নেতা বলেন, “কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দিল্লির তখ্ত দখলের ঘুঁটি সাজানো শুরু করে বিজেপি শিবির।”

আর এখন যে ভাবে বিজেপি শিবিরে তৎপরতা শুরু হয়েছে তা দেখে অনেকেই মনে করছেন তলে তলে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া অনেকটাই সেরে ফেলেছে তারা। এমনকী, আপের দুর্গেও ভাঙন ধরাতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। দলের বিধায়কদের একটা বড় অংশ যে বিজেপির সঙ্গে যেতে প্রস্তুত, তা বুঝেছেন কেজরীবাল। সেজন্যই এক সঙ্গে বিজেপি ও দলীয় বিধায়কদের বার্তা দিতে সরব হয়েছেন অরবিন্দ। আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে বিজেপির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ আনেন তিনি। উপরাজ্যপাল নাজিব জঙ্গের ভূমিকা নিয়েও রাষ্ট্রপতির কাছে সরব হয় আপ।

Advertisement

বর্তমানে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে পাঁচটি আসন কম রয়েছে বিজেপির। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ বার সরকার গঠনে তৎপর বিজেপি। অথচ, গত নভেম্বরে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও সরকার গঠনে বিন্দুমাত্র তৎপরতা দেখায়নি তারা। উল্টে নীতিগত কারণ দেখিয়ে সরকার না গড়ে, নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে বিজেপি সরব ছিল। তা হলে এখন কেন ভোলবদল? বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, তখন লোকসভা নির্বাচন সামনে ছিল। ফলে দলের বিরুদ্ধে বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ উঠলে ভোটের খারাপ ফল হতে পারত। কিন্তু এখন সেই দায়বদ্ধতা নেই। তা ছাড়া সরকার গঠন করলেই তা পাঁচ বছর চালাতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই। প্রয়োজনে কিছু দিন পরে সরকার ভেঙে নতুন করে নির্বাচনে যেতেই পারে দল।

আপ শিবিরের দাবি অবশ্য অন্য। তারা মনে করছে, সম্প্রতি একাধিক রাজ্যের উপনির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ায় নতুন করে নির্বাচনে যেতে ভয় পাচ্ছে বিজেপি। যে মোদী হাওয়ার উপর ভর করে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, তা-ও স্তিমিত। তা ছাড়া, লোকসভা ভোটে প্রবল মোদী হাওয়ার মধ্যেও বিধানসভা নির্বাচনের থেকে দিল্লিতে প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিল কেজরীবালের দল। লোকসভায় আসন না পেলেও দিল্লির বড় সংখ্যক মানুষ যে এখন কেজরীবালের পক্ষে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে বিজেপি শিবির। আর তা বুঝতে পেরেই নীতির প্রশ্ন ছেড়ে তারা ক্ষমতা দখলের দৌড়ে নেমে পড়েছে। কেজরীবালের অভিযোগ, “পাঁচ জনকে ভাঙাতে গিয়ে আপের এক-একজন বিধায়ককে কুড়ি কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। যাতে দলত্যাগ বিরোধী আইন থেকেও বাঁচতে পারেন বিধায়কেরা, সে জন্য বিধানসভার ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত থাকতে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।” আজ তাই কেজরীবাল দলীয় বিধায়কদের পরামর্শ দিয়েছেন, বিজেপির কোনও নেতা টাকার প্রস্তাব দিলে, তা স্টিং অপারেশন করে ধরে রাখতে হবে। তাঁর কথায়, “বিজেপির প্রকৃত চেহারা মানুষের সামনে তুলে ধরব আমরা।” যদিও কেজরীবালের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন রাজনাথ সিংহ। আজ জম্মুতে তিনি দাবি করেছেন, “কোনও দিনই বিজেপি বিধায়ক কেনাবেচার মতো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন