হোয়াটসঅ্যাপে ‘ভুয়ো খবর’ ছড়ানো বন্ধ করার পথ খুঁজবেন বালিগঞ্জের অভিজিৎ

বড়দিনের ছুটি মানেই ববি ওরফে অভিজিৎ বসু বালিগঞ্জের বাড়িতে। সেখানে গোটা পরিবার জড়ো হবে। জমিয়ে আড্ডা। ববি পার্ক স্ট্রিটে বেড়াতে যাবেন। ফিশফ্রাইয়ে কামড় বসাবেন। কারণ তিনি মাছের স্বঘোষিত ভক্ত।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৯
Share:

অভিজিৎ বসু

কলকাতায় সেরা ফিশফ্রাই কোথায় পাওয়া যায়, তিনি এক নিমেষে বলে দিতে পারেন! বড়দিন বা বছর শেষের রাতে আলো ঝলমল পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাতে তাঁর সঙ্গে আপনার ধাক্কা লেগে যেতেই পারে। আপনি হয়তো তখন হোয়াটসঅ্যাপ-এ ‘মেরি ক্রিসমাস’ বা ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ পাঠাতে ব্যস্ত। বুঝতেও পারবেন না, যে ভদ্রলোকের সঙ্গে ধাক্কা লাগল, তিনিই ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ কোম্পানির হবু প্রধান।

Advertisement

বড়দিনের ছুটি মানেই ববি ওরফে অভিজিৎ বসু বালিগঞ্জের বাড়িতে। সেখানে গোটা পরিবার জড়ো হবে। জমিয়ে আড্ডা। ববি পার্ক স্ট্রিটে বেড়াতে যাবেন। ফিশফ্রাইয়ে কামড় বসাবেন। কারণ তিনি মাছের স্বঘোষিত ভক্ত।

মেছো বাঙালি বটে। তবে অভিজিৎ ভেতো বাঙালি নন। তাঁর বাবা-মা কলকাতা ছেড়ে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। অভিজিৎ আবার তাঁদের আমেরিকায় রেখে সস্ত্রীক বেঙ্গালুরু চলে এসেছেন। সালটা ২০০৫। বাবা-মা ভেবেছিলেন, ছেলের মাথাটা বোধহয় খারাপ হয়ে গেল! যে ছেলে বড় হল আমেরিকায়, আমেরিকার স্কুলে পড়াশোনা করল, যার পকেটে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, হার্ভার্ডের এমবিএ ডিগ্রি, সান ফ্রান্সিসকোয় পাঁচ বছরের চাকরি, সে কিনা বেঙ্গালুরু গিয়ে থাকতে চায়! যাচ্ছে যাক, দু’বছরের মধ্যে ঠিক ব্যাগ গুছিয়ে ফিরে আসবে!

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রহারের মুখে ধনঞ্জয়, পথ খুঁজছে সিপিএম

১৩ বছর কেটে গিয়েছে। ববি বেঙ্গালুরুতেই রয়ে গিয়েছেন। বন্ধুবান্ধবদের কাছে নিজেও বলেন, ওরাক্‌ল-এর চাকরিটা করলে এত দিনে কোটিপতি হয়ে যেতেন! কিন্তু তাঁর স্বপ্ন যে আলাদা! আমেরিকায় বড় হওয়ার সূত্রে তিনি সিলিকন ভ্যালির হয়ে ওঠার পর্বটা চোখের সামনে দেখেছেন। ২০০৫-এর বেঙ্গালুরুর মধ্যে অনেকটা সেই রকম সম্ভাবনাই দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। নিজে কিছু করার ইচ্ছাটা তাই অদম্য হয়ে উঠছিল।

আরও পড়ুন: উৎকণ্ঠা নিয়েই অবতরণে তৈরি নয়া মঙ্গলযান

বেঙ্গালুরু হতাশ করেনি। ববির স্বপ্নও মিথ্যা হয়নি। এর মধ্যে বড়দিনের ছুটি কাটাতে প্রতি বছর নিয়ম করে পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতা। পার্ক স্ট্রিট ঘুরে ঢুঁ মেরেছেন টলি ক্লাবে। এখন কি বেঙ্গালুরুই তাঁর ঘরবাড়ি? অভিজিৎ বলেন, ‘‘আমরা আসলে যেখানে খুশি ঘর বাঁধতে পারি। শর্ত হল, সান ফ্রান্সিসকোর সঙ্গে বেঙ্গালুরুর তুলনা করতে বসলে চলবে না।’’

এই ১৩ বছরের পাওনা? জিজ্ঞেস করলে জবাব মেলে, ‘‘দুই সন্তান, দু’টো স্টার্ট-আপ।’’ প্রথমে বন্ধুদের নিয়ে তৈরি ‘এনজিপে’। তার পর ২০১১-য় ‘ইজ়িট্যাপ’। এখন যা দেশের প্রথম সারির ই-লেনদেন সংস্থা। ‘ইজ়িট্যাপ’-এর সিইও হিসেবে অভিজিতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এ বার নতুন যুদ্ধে নামতে চাইছেন মার্ক জ়াকারবার্গ। মেসেজ-বার্তার পাশাপাশি টাকা পাঠানো, বিল মেটানো, বাজারে গিয়ে দাম মেটানোর পরিষেবা যোগ করে হোয়াটসঅ্যাপ-কে করে তুলতে চাইছেন মুঠোবন্দি ব্যাঙ্ক। হোয়াটসঅ্যাপ অনেক দিন ধরেই পরীক্ষামূলক ভাবে এই পরিষেবা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধের জেরে এখনও তা সকলের জন্য খুলে দেওয়া যায়নি। অভিজিৎ কিন্তু দু’বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘‘একদিন গুগল, ফেসবুক সবাই ব্যাঙ্ক হয়ে যাবে। অফিস খুলতে হচ্ছে না। শুধু প্রযুক্তি চাই। আমি কোনও ব্যাঙ্কের সিইও হলে তো ভয়ে মরে যেতাম।’’
এটা অবশ্য মুখের কথা! অভিজিৎ ভয়ে মরার লোকই নন। বন্ধুদের প্রায়ই বলেন, ২০০৫-এ বেঙ্গালুরু এসে যখন কিছু করার কথা ভাবছেন, মোবাইল-ইন্টারনেট মানে এ দেশে তখন রিংটোন ডাউনলোড। স্টার্ট-আপের রমরমা শুরু হয়নি। স্মার্টফোন আসেনি। ফ্লিপকার্ট, ওলা, পেটিএম-এর মতো সংস্থাও মাঠে নামেনি। সেই সময় অভিজিৎ মোবাইল-ইন্টারনেট, ই-লেনদেনের দুনিয়ায় পা ফেলেছিলেন। এ বার ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে ‘হোয়াটসঅ্যাপ ইন্ডিয়া’-র দায়িত্ব নিয়ে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে ই-লেনদেনের রাস্তা খুলবেন। ‘ভুয়ো খবর’ ছড়ানো বন্ধ করার পথ খুঁজবেন। ক্যালিফর্নিয়ার বাইরে, গুরুগ্রামে হোয়াটসঅ্যাপের পূর্ণাঙ্গ বাহিনী তৈরি করবেন। হোয়াটসঅ্যাপ খুললে এটাই শুধু দেখা যাবে না, পর্দার আড়ালে মুচকি হাসছেন এক বঙ্গসন্তান!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement