লিভ ইন সঙ্গী রামকেশ মীনা (বাঁ দিকে)-কে খুনের অভিযোগে ধৃত তরুণী অমৃতা চৌহান (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
তাঁর পছন্দ অপরাধমূলক (ক্রাইম) ওয়েব সিরিজ়। তাই লিভ ইন সঙ্গী তথা ইউপিএসসি পরীক্ষার্থী রামকেশ মীনাকে খুনের আগে অভিযুক্ত তরুণী অমৃতা চৌহান কোনও ওয়েব সিরিজ় দেখেছিলেন কি না বা সেই ধরনের কোনও সিরিজ় থেকে হত্যার কৌশল নিয়েছিলেন কি না, এখন সেই তথ্য খুঁজে বার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৫ অক্টোবর রাতের মধ্যে রাকেশকে খুন করা হয়েছিল। অমৃতার বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস, ফোন এবং সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, লিভ ইন সঙ্গীকে খুনের পাঁচ দিন আগে বেশ কয়েকটি রিল বানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে বেশ সক্রিয় অমৃতা। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১১টি রিল শেয়ার করেছেন তিনি। তদন্তকারী এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অমৃতার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, হিন্দি গানের সঙ্গে বেশ কয়েকটি রিল করেছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ রিল পোস্ট করেছিলেন তিনি। তাঁর পাঁচ দিন পরই লিভ ইন সঙ্গীকে অমৃতা খুন করেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে খবর, লিভ ইন সঙ্গী রাকেশকে অনেক আগেই খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন অমৃতা। তিনি নিজে যেহেতু এক জন ফরেন্সিক বিষয়ের ছাত্রী, তাই খুনের পর কী ভাবে প্রমাণ লোপাট করা যায়, গোটা পরিকল্পনাটাই করেছিলেন অমৃতা। তদন্তকারী এক আধিকারিকের দাবি, অভিযুক্ত তরুণীর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল খুনের প্রমাণ মুছে দিতে একমাত্র উপায় অপরাধস্থলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। আর সেটাই করেছিলেন তিনি। আর যেহেতু তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক গ্যাস এজেন্সিতে কাজ করতেন, তাঁর অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগান অমৃতা।
পুলিশ সূত্রে খবর, রাকেশকে খুনের পর তাঁর ফ্ল্যাটে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল অমৃতার। তদন্তকারী এক আধিকারিকের দাবি, আগুন লাগিয়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করতে গিয়ে একটু ভুল করে ফেলেছিলেন অভিযুক্ত। রাকেশের ঝলসে যাওয়া দেহের কাছেই গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা ভেবেছিলেন, এসিতে বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে গিয়েছে, কিন্তু ঘরে ঢুকে দেখা যায়, এসির কোনও ক্ষতিই হয়নি। এমনই জানিয়েছেন তদন্তকারী এক আধিকারিক।
ডিসিপি রাজা ভাটিয়া জানিয়েছেন, অমৃতার প্রাক্তন প্রেমিক সুমিত কাশ্যপ গ্যাস সিলিন্ডারের নব খুলে তাতে আগুন ধরান। ফ্ল্যাটের বাইরে তাঁরা তিন জনে বেরোনোর পর লোহার গেটে ভিতর দিয়ে তালা লাগান। যাতে কেউ ধরতে না পারেন, ফ্ল্যাটে অন্য কেউ এসেছিলেন। তার পর অমৃতা, তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক এবং আরও এক অভিযুক্ত সন্দীপ কুমার আবাসন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা বেরিয়ে আসার ১৫ মিনিট পর বিস্ফোরণ হয়। আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিন জনকে চিহ্নিত করে পুলিশ। তার পরই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অমৃতার কিছু অশ্লীল ছবি রাকেশের কাছে ছিল। এমনই দাবি করেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, সেই ছবি মুছে দিতে বলেছিলেন রাকেশকে। কিন্তু অভিযোগ, তিনি সেই ছবি মুছতে অস্বীকার করেন। প্রাক্তন প্রেমিককে গোটা বিষয়টি জানান অমৃতা। তার পর তাঁরা দু’জন মিলে রাকেশকে খুনের পরিকল্পনা করেন। অমৃতার গ্রামের আরও এক যুবক এই কাজে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ। ১৮ অক্টোবর অমৃতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে জেরা করে দুই সঙ্গী সুমিত এবং সন্দীপের খোঁজ পায় পুলিশ। উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে ২১ অক্টোবর সুমিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সন্দীপ গ্রেফতার হন ২৩ অক্টোবর।