লোকসভা নির্বাচনের দিন যত এগোচ্ছে, ততই কি সন্ত্রস্ত হয়ে উঠছে নরেন্দ্র মোদী সরকার? একই দিনে দেশের বিভিন্ন শহর থেকে বেশ কয়েক জন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতারের পরে এই প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। একই প্রশ্ন বিশিষ্ট জনদের একটা বড় অংশেরও। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহিরের দাবি, ‘‘পুলিশ যথাযথ তদন্ত করেই ওই গ্রেফতারি করেছে। গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন না তুলে বরং বিচারব্যবস্থার উপর ভরসা রাখাটাই যুক্তিযুক্ত।’’
ভারাভারাদের গ্রেফতারের ঘটনায় হতবাক অরুন্ধতী রায়ের মতো বহু বিশিষ্ট জন। ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ এই ধরপাকড়কে ‘ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য রাষ্ট্রের নৃশংস, দমনমূলক এবং বেআইনি পদক্ষেপ’ বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গাঁধী যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তা হলে নিশ্চয়ই আইনজীবীর পোশাক পরে সুধা ভরদ্বাজের হয়ে মামলা লড়তেন।
তবে মোদী সরকার হয়তো গাঁধীকেও গ্রেফতার করত!’’ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী টুইট করেন, ‘‘ভারতে এখন একটাই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার নাম আরএসএস। আর সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বন্ধ করে দিন। সব মানবাধিকার কর্মীকে জেলে পুরে দিন। যাঁরা আপত্তি জানাবেন, তাঁদের গুলি করে মারুন! নতুন ভারতে স্বাগত!’’
সমাজকর্মীদের অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছে সিপিএম। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মঙ্গলবার কলকাতায় বলেন, ‘‘ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে ভীমা-কোরেগাঁও থেকে। দলিত মানুষের উপরে যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের এক জনকেও গ্রেফতার করা হয়নি। ভিডিয়ো ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অপরাধীরা অধরা। অথচ যাঁরা আক্রমণের প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের সন্ত্রাস-বিরোধী আইনে ফাঁসানো হচ্ছে! মোদী সরকারের এই স্বৈরাচারী মনোভাবের জবাব অদূর ভবিষ্যতেই মানুষ দেবেন।’’
কী হয়েছিল ১ জানুয়ারি?
দলিতদের ২০০তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ভীমা-কোরেগাঁওয়ের উৎসবে হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে দলিতদের সংঘর্ষ বাধে। এক জন নিহত হন। জখম হন অনেকে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস তখন বলেছিলেন, ‘‘আমাদের রাজ্য অত্যন্ত আধুনিক রাজ্য। এখানে জাতভিত্তিক রাজনীতি চলবে না।’’ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
সেই সংঘর্ষের তদন্তে নেমে জুন মাসে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুণে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক সোমা সেন, আইনজীবী সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, সমাজকর্মী সুধীর ধাওয়ালে, মানবাধিকার কর্মী রোনা উইলসন এবং উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনের কর্মী মহেশ রাউত।
৮ জুন পুণের এক আদালতে পুলিশ
দাবি করেছিল, উইলসনের বাড়ি থেকে পাওয়া একটা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ছক কষা হয়েছে। পুলিশের দাবি, সেই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘বহু সফল মাওবাদী হামলার অনুপ্রেরণা ভারাভারা’। চিঠিতে আরও বলা ছিল, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘রাজীব গাঁধীর মতো’ শেষ করে দিতে হবে। এর জন্য আট কোটি টাকা দিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনী যে এম৪ রাইফেল ব্যবহার করে সেই রাইফেল ও চার লক্ষ গুলি কেনার কথাও লেখা ছিল চিঠিতে।
ভারাভারা আজ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে মারার ক্ষমতা মাওবাদীদের নেই।’’ উইলসনকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চিনলেও এ ধরনের কোনও অস্ত্র কেনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন ভারাভারা। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কোনও তথ্য-প্রমাণ পাবে না পুলিশ। শুধু গ্রেফতার করে ভুয়ো মামলা দেবে।’’
পুলিশ আজ হায়দরাবাদ থেকে ভারাভারা-ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক ক্রান্তি টেকুলাকে আটক করেছে। রাঁচীতে স্ট্যান স্বামী ও গোয়ায় আনন্দ তেলতুন্ডে এবং সুসান আব্রাহামের বাড়িতেও যায় পুলিশ। মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এঁরা। প্রত্যেকের ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও নানা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।