Adhir Ranjan Chowdhury

‘স্বাধিকাররক্ষা কমিটি ডাকলে হাজির হব, কিন্তু ক্ষমা চাইব কেন?’ বললেন সাসপেন্ড সাংসদ অধীর

তবে তাঁর সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি অধীর। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি এখন আমার বিবেচনার স্তরে রয়েছে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ১৬:২৮
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে অধীর চৌধুরী। ছবি: পিটিআই।

লোকসভার স্বাধিকাররক্ষা কমিটি ডেকে পাঠালে অবশ্যই তিনি যাবেন। কিন্তু ক্ষমা চাইবেন না। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট ভাষায় এ কথা জানিয়ে দিলেন লোকসভা থেকে সাসপেন্ড হওয়া কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। পাশাপাশি, অভিযোগ তুললেন ‘ইন্ডিয়া’-র কণ্ঠরোধের উদ্দেশে সংসদের সদ্যসমাপ্ত বাদল অধিবেশনে বার বার সংসদীয় রীতি ভেঙেছে শাসকদল বিজেপি। তাঁর কথায়, ‘‘অনাস্থা প্রস্তাব পেশের পরেও সরকার একের পর এক বিল পাশ করেছে, এমন ঘটনা লোকসভায় নজিরবিহীন।’’

Advertisement

অনাস্থা বিতর্কপর্বে বৃহস্পতিবার তাঁর সাসপেনশনের প্রস্তাব পাশ হয়। এই প্রসঙ্গে অধীর বলেন, ‘‘আমি মাননীয় স্পিকারের কোনও নির্দেশ অমান্য করিনি। আর আমার কোনও কথা ‘অসংসদীয়’ মনে হলে সরকারপক্ষ সংসদের ‘রুল বুক’ মেনে সে বিষয় আপত্তিও তুলতে পারেন। স্পিকার তা বাদও দিতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিত ভাবে শাসক শিবির আমাকে আঘাত করে বিরোধীদের চুপ করাতে চাইছে।’’ লোকসভা থেকে তাঁকে প্রথমে সাসপেন্ড করে তার পর বিষয়টি স্বাধিকাররক্ষা কমিটির কাছে পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধীর বলেন, ‘‘এ যেন আগে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার পর বিচার শুরুর মতো। এমন ঘটনা সংসদীয় রাজনীতির আদর্শের পরিপন্থী।’’

তবে তাঁর সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি অধীর। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি এখন আমার বিবেচনার স্তরে রয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’র আনা অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কে বুধ এবং বৃহস্পতিবার উঠে এসেছিল অধীরের নাম। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দেন অধীরকে। বৃহস্পতিবার তাঁর বক্তৃতার সময় বার বার বাধা দেন বিজেপি সাংসদেরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির শেষে ‘অসংসদীয় আচরণের’ অভিযোগ তুলে অধীরের বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব এনেছিলেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। বিরোধীশূন্য লোকসভায় সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে অধীরকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার ওম বিড়লা। সে সময় অধীর-সহ ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদেরা সভা থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না-দিয়েই একতরফা ভাবে অধীরকে সাসপেন্ড করার ঘটনায় সংসদীয় বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশেরও।

অধীরের দাবি, ‘‘আমি কোনও অংসদীয় শব্দ বলিনি। কাউকে আঘাত বা অপমান করিনি। হয়তো বিজেপি আগামী দিনে ‘গেরুয়া অভিধান’ চালু করবে। শাসক পক্ষের সাংসদদের সব কিছু বলার ছাড়পত্র থাকবে। বিরোধীদের জন্য নানা বিধিনিষেধ থাকবে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মোদীর বক্তৃতায় সময় বার বার আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, ‘মণিপুর নিয়ে বলবেন কি?’ প্রায় দু’ঘণ্টা সময় পার হয়ে গেলেও তিনি মণিপুর নিয়ে কিছু বলেননি। এমনকি, বিজেপির সাংসদেরাও বসে বসে ঝিমোচ্ছিলেন। আপনারা সে দিনের ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখলেও বুঝতে পারবেন সে কথা।’’

বৃহস্পতিবার সভা মুলতুবির আগে স্পিকার জানান, যত দিন না লোকসভার স্বাধিকাররক্ষা কমিটি অধীরের বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেয়, তত দিন তিনি সাসপেন্ড থাকবেন। শুক্রবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে অধীরের সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত স্বাধিকাররক্ষা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা। যাতে অধীর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে না পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ। এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল।’’ কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ শুক্রবার জানিয়েছেন, অধীর ক্ষমা না-চাওয়ার কারণেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে অধীরের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কেন আমি ক্ষমা চাইব?’’

অধীর এর আগে তাঁর সাসপেনশনের সিদ্ধান্তকে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের মস্তানি’ বলে চিহ্নিত করে বলেছিলেন, ‘‘শুধু প্রহ্লাদ জোশী কেন, বিজেপির সব নেতারা মিলে যদি আমার একটা শব্দ, একটা ব্যাখ্যা মানুষের বিচারে ‘ভুল’ প্রমাণ করতে পারেন, তবে আমি আমার রাজনৈতিক জীবন ছেড়ে দেব।’’ অধীরের দাবি, কোনও অসংসদীয় শব্দ নয়, ভাষার অলঙ্কার ব্যবহার করেছেন তিনি। অধীরের দাবি, চন্দ্রযান থেকে কুনোর চিতা পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে মোদী কথা বললেও মণিপুর প্রসঙ্গে চুপ থাকায় তিনি ‘নীরব’ শব্দ এবং ‘অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র’ উপমা ব্যবহার করেছেন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার আরও মন্তব্য, ‘‘মোদী এবং শাহ ‘ইন্ডিয়া’কে ভয় পেয়েছেন।’’ তাঁকে বার বার বক্তব্য পেশে বাধা দেওয়া হয়েছে দাবি করে অধীরের মন্তব্য, ‘‘মোদীকে যে আমরা সংসদে হাজির হতে বাধ্য করলাম, সেটা ওঁদের সহ্য হচ্ছে না।’’ এমনকি, বিজেপির উত্তরপ্রদেশের এক সাংসদ তাঁকে মারতে এসেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন অধীর। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। আমাকে ক্ষমা চাইতে বলার হিম্মত ওঁদের নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন