পার্কে নমাজ নয় যোগীর রাজ্যে, নয়া ফরমান ঘিরে বিতর্ক

নির্দেশিকা জারির পরে ওই শিল্পাঞ্চলে মুসলিম কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কোম্পানিগুলির কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন।

Advertisement

সংবাদসংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৮
Share:

যোগী আদিত্যনাথ

একাধিক জায়গার নামবদল, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিন ছুটি বাতিল-সহ নানা বিষয়ে নির্দেশ জারি করে বিতর্কে জড়িয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল পার্কে নমাজ পাঠে নিষেধাজ্ঞা!

Advertisement

গত সপ্তাহে নয়ডার সেক্টর-৫৮-এর একটি পার্কে নমাজ পাঠ করা যাবে না বলে ফরমান জারি করেছে পুলিশ। ওই নির্দেশিকায় কোম্পানিগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে, তাদের কর্মীরা যদি পার্কটিতে নমাজ পাঠ করেন, তা হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই নির্দেশভঙ্গের দায় নিতে হবে। নির্দেশিকা জারির পরে ওই শিল্পাঞ্চলে মুসলিম কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কোম্পানিগুলির কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন।

নয়ডার সেক্টর-৫৮ এলাকায় এইচসিএল-সহ ১২টি বহুজাতিক সংস্থাকে পার্কে নমাজ পাঠ বন্ধের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে। সংস্থাগুলির মুসলিম কর্মীরা শুক্রবার কাজের সময় ওই পার্কটিতে কয়েক বছর ধরেই নমাজ পাঠ করছেন। ওই নোটিসে বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলির কিছু মুসলিম কর্মীকে শুক্রবার পার্কে নমাজ পড়তে দেখা যায়। তাঁদের ওই কাজ করতে যেন নিষেধ করা হয়। তা সত্ত্বেও যদি পার্কে কর্মীদের নমাজ পাঠ করতে দেখা যায়, তা হলে কোম্পানিগুলিকে নির্দেশভঙ্গের দায় নিতে হবে। সূত্রের খবর, একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই নির্দেশিকা জারি করেছে। ওই সংগঠনটি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিল, প্রকাশ্যে নমাজ পাঠে এলাকায় ‘সম্প্রীতি বিঘ্নিত’ হচ্ছে।

Advertisement

নির্দেশিকার ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে অস্বস্তিতে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। নয়ডার এসএসপি অজয় পালের বক্তব্য, কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘কিছু লোক সেক্টর-৫৮’র পার্কটিতে নমাজ পাঠের অনুমতি চেয়েছিলেন। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেননি। কিন্তু এখনও সেখানে কিছু লোক ধর্মীয় কারণে জড়ো হচ্ছেন। তাঁদের উদ্দেশেই ওই নোটিস।’’

গত পাঁচ বছর ধরে সেক্টর-৫৮’র পার্কটিতে নমাজ পাঠ করাচ্ছেন মৌলানা নৌমান। তিনি জানান, গত ১৪ ডিসেম্বর তাঁদের পুলিশ জানিয়েছিল, ওই পার্কে নমাজ পাঠ করা যাবে না। তিনি সেই নির্দেশ মেনেছেন। কিন্তু তার পরেও তাঁকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে দাবি মৌলানার। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘‘নমাজ পাঠের জন্য এলাকায় শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে অভিযোগে গত ১৮ ডিসেম্বর আমাকে এবং আমার বন্ধু আদিল রশিদকে গ্রেফতার করা হয়। ২২ ডিসেম্বর জামিন পেয়েছি।’ ’

বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতা দখলের পর থেকে গোরক্ষা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা। সম্প্রতি কয়েকটি জায়গার নাম বদলেছে। এমনকি, গত বছর দু’টি মুসলিম পরবের দিন সরকারি ছুটিও বাতিল করেছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। সেই পথ ধরেই নমাজ নিয়ে এমন নিষেধাজ্ঞা। যোগী যদিও আজ বলেছেন, ‘‘জাত-ধর্মের ভিত্তিতে যারা নেতিবাচক রাজনীতি করে, তারা আসলে গণতন্ত্রকেই ঠকায়।’’ যদিও সেই মন্তব্যেও ভোট-অঙ্ক দেখছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন