নীতীশের পরে হরীশ, প্রশ্নে অমিতের নীতি

লাঠি ভাঙল। সাপ বাঁচল। মরল সাপের শত্রু! কী কৌশলই না করলেন অমিত শাহ! উত্তরাখণ্ডে তড়িঘড়ি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা ঠিক কৌশল কি না, তা নিয়ে প্রথম থেকেই দ্বিমত ছিল বিজেপিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

লাঠি ভাঙল। সাপ বাঁচল। মরল সাপের শত্রু! কী কৌশলই না করলেন অমিত শাহ!

Advertisement

উত্তরাখণ্ডে তড়িঘড়ি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা ঠিক কৌশল কি না, তা নিয়ে প্রথম থেকেই দ্বিমত ছিল বিজেপিতে। কিন্তু দলের একাংশের আপত্তি উড়িয়েই কংগ্রেসের হাত থেকে আর একটি রাজ্য ছিনিয়ে নিতে মরিয়া ছিলেন বিজেপি সভাপতি। কিন্তু বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসিদের তাতিয়ে উত্তরাখণ্ডে হরীশ রাওয়ত সরকারকে উৎখাত করার কৌশল পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়ার পরে অমিতের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসছে দলে।

সুপ্রিম কোর্ট আজ হরীশকে আস্থা ভোটে জয়ী ঘোষণা করে দেওয়ার পরপরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা তড়িঘড়ি উত্তরাখণ্ড থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। হরীশ যে শুধু সরকারে ফিরে এলেন তা-ই নয়, ফিরলেন কণ্টকমুক্ত হয়ে। দলে বিক্ষুব্ধদের বোঝা আর বইতে হবে না তাঁকে। হরীশের ঘাড় থেকে তাঁদের নামানোর কাজটা কার্যত করে দিয়েছেন অমিতই। বিহারে ঠিক একই ভাবে জিতনরাম মাঁঝিকে উস্কে দিয়ে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়ে ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন অমিত শাহ। আখেরে নীতীশই শক্তিশালী হয়ে ক্ষমতায় ফেরেন। আর মাঁঝির মতো নেতাদের সঙ্গী করে ভোটে ভরাডুবি হয় বিজেপির।

Advertisement

বিজেপির একাধিক নেতার মতে এটাই, লাঠি ভেঙে সাপের শুত্রু বিদেয় করা! প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও দলের মধ্যে তাঁরা বলছেন, এ ভাবে বিক্ষুব্ধ রাজনীতিতে ধুয়ো দিয়ে ক্ষমতা দখলের কৌশল যখন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে, তখন তা বর্জন করা উচিত অমিতের। কংগ্রেসে বিদ্রোহের আঁচ পেয়ে তিনিই কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে উত্তরাখণ্ডে পাঠিয়ে রাওয়ত সরকার ফেলার ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন। পরে নরেন্দ্র মোদীও অমিতের কৌশলে সিলমোহর বসান। কিন্তু দলের কিছু নেতার মতে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহের মতো নেতাদের আপত্তি ছিল। কিন্তু অনড় ছিলেন অমিত।

দলের এক নেতা বলেন, ‘‘মাস কয়েক আগেও রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল ছিলেন হরীশ। সহানুভূতির হাওয়া পেয়ে তিনিই আরও শক্তিশালী হলেন। ঠিক যে ভাবে বিহারে নীতীশ কুমার হয়েছিলেন।’’ গোটা পর্বের নিট ফল কী দাঁড়াল? বিজেপি নেতারাই বলছেন, l ৩৫৬ ধারা প্রয়োগে সম্মতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
l মায়াবতীর মতো নেত্রীও বিজেপি-বিরোধী অবস্থান নেওয়ার সুযোগ পেলেন। l মোদী-বিরোধী দলগুলি এককাট্টা হওয়ার সুযোগ পেয়ে পেল।  রাওয়ত সরকার তো পড়লই না, উল্টে বিক্ষুব্ধরা মুছে গেল হরীশের পাশ থেকে।  সব দিক থেকে বিপাকে পড়ল বিজেপিই।

বিজেপি নেতারা কবুল করছেন, যে কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণ শানানো হচ্ছিল, উত্তরাখণ্ডের ঘটনা তাতে বড়সড় ধাক্কা দিল। উল্টে সনিয়ারাই মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাতে গ্যাস দুর্নীতির অস্ত্রে শান দিচ্ছেন। কংগ্রেস-বাম-আপ এখন একযোগে বলছে, ‘‘গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। আশা করি, মোদী সরকার আর কোনও সরকারকে এ ভাবে ফেলে দেওয়ার সুযোগ খুঁজবে না।’’

আগামী ১৯ তারিখ পাঁচ রাজ্যের ফল বেরোলে বিজেপির পক্ষে হই-হই করে উল্লাস করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে, এমন আশা কম। এই অবস্থায় নির্ধারিত মেয়াদের আগে আজই লোকসভার অধিবেশন শেষ করে দিয়েছে সরকার। আগামিকাল মুলতুবি হয়ে যেতে পারে রাজ্যসভাও। শেষবেলায় আজ সুর নরম করে কংগ্রেসের সাহায্য প্রার্থনা করল সরকার পক্ষ। রাজ্যসভায় কাল প্রায় পঞ্চাশ জন সদস্যের অবসর উপলক্ষে বিদায়ী বক্তব্য হবে। কিন্তু এর পরে নতুন যাঁরা আসবেন তাঁদের নিয়েও কিন্তু রাজ্যসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হবে না। তাই জেটলি আজ যেমন এক দিকে গুজরাতের গ্যাস উত্তোলন নিয়ে বিতর্কে মোদীকে আড়াল করার চেষ্টা করলেন, একই সঙ্গে আগামী বাদল অধিবেশনে পণ্য-পরিষেবা কর বিল নিয়ে কংগ্রেসের সাহায্য প্রার্থনা করলেন। জানালেন, কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলতে তিনি রাজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন