নীরজ-হত্যার মধ্যে দিয়েই ভাঙন শুরু হল কয়লানগরী ধানবাদের ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’, সুরজদেও সিংহের পরিবারে। এক দিকে রয়েছেন সুরজদেও সিংহের ছেলে, বর্তমানে ঝরিয়ার বিজেপি বিধায়ক সঞ্জীব সিংহ, অন্য দিকে তাঁর ভাই রাজনারায়ণের ছেলে নীরজ সিংহ।
গত কাল সন্ধ্যায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন ধানবাদের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র নীরজ। নীরজের অনুগামীদের আঙুল সঞ্জীবের দিকেই। গত রাতে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে নীরজ-অনুগামীদের হামলার হাত থেকে রক্ষা করতে বিশাল পুলিশ বাহিনী দিয়ে সুরজদেওয়ের বিখ্যাত ‘সিং ম্যানসন’ ঘিরে রাখতে হয়। গত ২৯ জানুয়ারি সঞ্জীবের ঘনিষ্ট রণজয় সিংহকে গুলি করে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। রণজয় সিংহ খুনের বদলা হিসেবেই কী গত কাল রাতে একে-৪৭ দিয়ে নীরজ সিংহকে ঝাঁঝরা করে দিল দুষ্কৃতীরা? আপাতত এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে ধানবাদ পুলিশ। ধানবাদের এসএসপি মনোজ রতন চৌথে বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। এই খুন, বদলার খুন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
প্রাথমিক ভাবে নীরজ সিংহের খুনের ঘটনাকে পারিবারিক বিবাদের জের বলেই মনে করছে পুলিশ। সঞ্জীব ও নীরজ জেঠতুতো-খুড়তুতো ভাই। ধানবাদের মাফিয়ারাজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক শীর্ষ পুলিশ কর্তার বক্তব্য, ধানবাদের কয়লা মাফিয়াদের মাথায় ছিলেন বালিয়ার রাজপুত সুরজদেও সিংহ। একদিকে কয়লা-মাফিয়া, অন্য দিকে কয়লা শ্রমিকদের বৃহত্তম সংগঠনের প্রধান। এক সামান্য কয়লা শ্রমিক থেকে সুরজদেও এমন জায়গায় উঠে আসেন যে তাঁর ভয়ে ধানবাদে বাঘে-গোরুতে এক ঘাটেই জল খেত। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু সুরজদেওয়ের রাজনৈতিক প্রতিপত্তিও ছিল অসীম। তিনি মারা যাওয়ার পরেই সিং ম্যানসনে ভাঙনের শুরু। ভাইপো নীরজ সঞ্জীবের নেতৃত্ব না মেনে বেরিয়ে আসেন সিং ম্যানসন থেকেই। সরাইঢেলার একই রাস্তার উপরে নীরজ তৈরি করেন নিজের বাংলো ‘রঘুকুল’। একদা বিজেপি নীরজ ঝরিয়ার টিকিট না পেয়ে পাল্টে ফেলেন রাজনৈতিক শিবিরও। যোগ দেন কংগ্রেসে। ইঞ্জিনিয়ার নীরজ ধানবাদের ডেপুটি মেয়র হন। তাঁর ভাই একলব্য এখন ওই পদে রয়েছেন।
পুলিশকর্তাদের কথায়, সুরজদেওয়ের মৃত্যুর পর থেকেই ব্যবসার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েই দুই পরিবারের মধ্যে রেষারেষি চলছে। কয়েক মাস আগে ধানবাদের একটি মার্কেট কমপ্লেক্সের দখল নিয়েও সঞ্জীব ও নীরজের মতবিরোধ হয়। কে কোন এলাকার কয়লা খনির ‘রংদারি ট্যাক্স’ নেবে রেষারেষি শুরু হয় তা নিয়েও। কাল রাতে নীরজ বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছেই গুলিবিদ্ধ হন। নীরজের সঙ্গেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তার পিএ অশোক যাদব, দেহরক্ষী মুন্না তিওয়ারি, চালক ঘোল্টু মাহাতো। এ দিন সকাল থেকে ধানবাদের হীরাপুর, সরাইঢেলা, বড়টাঁড়ের দোকানপাট সব বন্ধ ছিল। বিকেলে দামোদরের মহুলবনী ঘাটে নীরজের সৎকার হয়। মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস দোষীদের দ্রুত ধরতে ডিজিপি ডি কে পাণ্ডেকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী কাল কংগ্রেস ধানবাদ বন্ধের ডাক দিয়েছে।