কপ্টার দুর্নীতি

ব্যাকফুটে খেলা নয়, ফের স্পষ্ট কংগ্রেসের চালে

জাল যত বিছোচ্ছে, পারদও তত চড়ছে। কাল সংসদে কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার আগে আজ মুখ খুললেন রাহুল গাঁধী। দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণের মুখে সনিয়ার মতো আক্রমণাত্মক লাইন না নিয়ে বরং খেললেন সহানুভূতি আদায়ের তাস। বললেন, ‘‘আমাকে সব সময়েই আক্রমণ করা হয়। ফের আক্রমণের মুখে পড়ে আমি খুশি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৪:৩৭
Share:

মঙ্গলবার সংসদে রাহুল। ছবি: পিটিআই

জাল যত বিছোচ্ছে, পারদও তত চড়ছে। কাল সংসদে কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার আগে আজ মুখ খুললেন রাহুল গাঁধী। দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণের মুখে সনিয়ার মতো আক্রমণাত্মক লাইন না নিয়ে বরং খেললেন সহানুভূতি আদায়ের তাস। বললেন, ‘‘আমাকে সব সময়েই আক্রমণ করা হয়। ফের আক্রমণের মুখে পড়ে আমি খুশি।’’

Advertisement

কপ্টার দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের অভিমুখ এখন সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর দিকে রেখেই এগোতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিজেপির অভিযোগ, কপ্টার-দুর্নীতিতে ঘুষ খেয়েছেন সনিয়া। আর ইতালির দালালকে নিজের পারিবারিক সংস্থায় নির্দেশক করেছেন রাহুল গাঁধীর সহায়ক— এই বলে বিজেপির আর এক সাংসদ গাঁধী পরিবারকে আরও প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আগামিকাল রাজ্যসভায় কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। তার আগেই আজ এল রাহুলের মন্তব্য। যা শুনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বি কে সিংহ বলেছেন, ‘‘অনেকেই সহানুভূতি আদায়ের তাস খেলতে পছন্দ করেন। রাহুলও যদি সে পথে হাঁটতে চান, হাঁটতেই পারেন!’’

কিন্তু কংগ্রেসও সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া আজ বলেছেন, ‘‘আমরাও সংসদে আলোচনা চাইছি। তাতে আসল ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। বিজেপির তোলা কোনও অভিযোগেরই তো কোনও ভিত্তি নেই।’’ জ্যোতিরাদিত্য আরও দাবি করেছেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর সহায়ক কণিষ্ক সিংহের সঙ্গে অভিযুক্ত সংস্থার আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই।’’

Advertisement

কপ্টার-দুর্নীতিতে সাফাই দেওয়া ছাড়া কংগ্রেসের হাতে অবশ্য আরও দু’টি অস্ত্র রয়েছে। এক, মোদী জমানায় গুজরাত রাজকোষের ঘাটতি সম্পর্কে সিএজির রিপোর্ট। আর দুই, ভারতে আটক ইতালীয় মেরিনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের সালিশি আদালতের নির্দেশ।

সম্প্রতি কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)-এর একটি রিপোর্টে গুজরাত সরকারের কড়া সমালোচনা করে বলা হয়েছে, কৃষ্ণা-গোদাবরী অববাহিকায় প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের জন্য গুজরাত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ধার করে প্রায় কুড়ি হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুই হয়নি। ফলে জনগণের অর্থ পুরোটাই জলে গিয়েছে! বিষয়টি সংসদে
ওঠার আগে আজ বিজেপির পক্ষ থেকে আট পাতার একটি সাফাইনামা তৈরি করা হয়েছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় গ্যাস উত্তোলনের সিদ্ধান্তের পিছনে নরেন্দ্র মোদী বা অন্য কোনও মন্ত্রীর হাত ছিল না। গুজরাত পেট্রোলিয়াম সংস্থার বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কংগ্রেস বরং তাদের জমানায় ব্যর্থ প্রকল্পগুলির হদিস নিক। আর রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দেশ প্রসঙ্গে অরুণ জেটলি আজ সংসদে বলেন, এটি দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি হস্তক্ষেপ। এই মন্তব্য অবশ্য চুপ করাতে পারেনি কংগ্রেসকে। তাদের অভিযোগ, সরকারের দুর্বল যুক্তির জন্য খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ইতালীয় মেরিনকে এখন ছেড়ে দিতে হবে।

তবে বিজেপি নেতৃত্বের কাছে এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ, সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে যে ভাবে সরাসরি অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটি নিরন্তর জিইয়ে রাখা। এবং এ ব্যাপারে কংগ্রেসকে এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে না দেওয়া। সে কারণে রাহুল গাঁধীর সহায়কের পারিবারিক সংস্থার বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) যেমন তদন্ত শুরু করে দিয়েছে, তেমনই কপ্টার-দুর্নীতি নিয়েও তদন্ত চলছে জোরকদমে। প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগীকে আজ দ্বিতীয় দফায় দিনভর জেরা করে সিবিআই। পরে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, জেরায় ত্যাগী কবুল করেছেন যে, ইতালীয় সংস্থার সিইও-র সঙ্গে তিনি দিল্লিতে দেখা করেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন